বোরো মৌসুমে ডিজেলে কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি সরকার গভীরভাবে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম না কমলে ডিজেলেও আমাদের কিছু একটা করতে হবে ।
আরও পড়ুন…ইনার মঙ্গোলিয়ার থু ছুয়ান জেলার গ্রীনহাউস শিল্প
যাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে। বর্তমানে ডিজেলের দাম অনেক বেশি। এতে বোরো মৌসুমে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আমরা সারে যেমন ভর্তুকি দেই, তেমনি বোরোতে প্রয়োজনে ডিজেলে ভর্তুকি দেয়া হবে। সরকার গভীরভাবে এ বিষয়টি বিবেচনা করছে।
সকালে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের উপর কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন এর সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এ কর্মশালার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন…বিজিবি’র আগস্ট মাসে ১১২ কোটির বেশি চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ
মন্ত্রী বলেন, অনাবৃষ্টির জন্য আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। এখন বৃষ্টির মৌসুম, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার কথা, কিন্তু হচ্ছেনা; এটাই আমাদের জন্যে কনসার্ন। প্রত্যেকদিনই আমরা ভাবছি বৃষ্টি হবে, কিন্তু হচ্ছেনা। বৃষ্টি না হলে হয়তো আমনের উৎপাদন কম হবে। অন্যদিকে আমনের টাকা দিয়ে কৃষকেরা অনেকসময় বোরোতে বিনিয়োগ করে। সার, ডিজেল কিনে ও সেচ খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটায়। কাজেই, বৃষ্টি না হওয়ার জন্য আমন উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষকের উপর এর প্রভাব পড়বে।
মন্ত্রী আরো বলেন, খাদ্যের জন্যে আমরা কারো উপর নির্ভরশীল হতে চাই না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যের দাম বাড়লে বা বাজার অস্থিতিশীল থাকলে টাকা বা ডলার থাকা সত্ত্বেও খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে না। সেজন্য, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে চাই। সেলক্ষ্যেই বর্তমান সরকার কাজ করছে।
আরও পড়ুন…শুরু হয়েছে চীনের আন্তর্জাতিক সেবা বাণিজ্যমেলা
খাদ্য নিরাপত্তায় ‘টেকসই সেচ ব্যবস্থাপনা’ গড়ে তুলতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছি। একদিকে সেচকাজে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ চলছে, অন্যদিকে বারিড পাইপ (ভূগর্ভস্থ পাইপ) ব্যবহার করে সেচদক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার নাদরিয়া সিম্পসন। গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিএসআইআরও বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান। এসময় ইমেরিটাস অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন…বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত,পাথরঘাটায় ছাত্রলীগের হামলা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানির (বিশেষত ভূগর্ভস্থ পানি) টেকসই স্তর নির্ধারণ এবং পানির ব্যবহারের পরিবর্তনের উপর নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাবের মূল্যায়নের জন্য গবেষণাটি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সিএসআইআরও এর সাথে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানান হয়, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কতোটুকু পানি লাগে তা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে এটি একটি ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৫-১৬ সালে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লেগেছে আর ২০১৬-১৭ সালে লেগেছে ৫৮৪ লিটার।
আরও দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বোরো ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বেশি দূষ্পাপ্র্য এলাকায় তুলনামূলকভাবে সেচ খরচ বেশি হয়, অন্যদিকে উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকের লাভ কম হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো চাষ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বত্র নিচে নেমে যায়নি। শুধু নওগাঁ, নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী- এই তিনটি জেলায় পানির স্তর নিচে নেমেছে। এছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। উজানে নদীর নিয়ন্ত্রণ, শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পানির স্তর নিচে নামছে।
আরও পড়ুন…হাতিয়াতে ডিজেল জব্দ ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার-১
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত এক দশকে বোরো ধানের সম্প্রসারণ কমে এসেছে বা কোথাও সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে গেছে। বোরো ধানের স্থানে এসেছে আউশ ধান। বিশেষত বরেন্দ্র এলাকায় বিগত ১০ বছরে বোরো ধান সম্প্রসারণের কোন নতুন এলাকা পাওয়া যায়নি।
ইবাংলা/জেএন/০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.