ডিবি কার্যালয়ে হাজির হয়ে নিজের অঢেল সম্পদের যে ফিরিস্তি দিয়েছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের, তা অবিশ্বাস্য লেগেছে খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেই।
আজ (মঙ্গলবার) মুসা বিন শমসেরকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (গুলশান) হারুন অর রশীদের কথায় তেমনটাই উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, উনাকে (মুসা) আমাদের রহস্যময় মানুষ মনে হয়েছে। আমরা তাকে বলেছি, সুইস ব্যাংকে আপনার ৮২ কোটি ডলার আছে, অথচ আপনার কাগজ থাকে কাদেরের অফিসে?
হারুন বলেন, এ প্রশ্নের জবাবে মুসা জানান, তার কলমের দাম ১০ কোটি টাকা, ঘড়ির দাম ৮ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংক থেকে তিনি ৮২ কোটি ডলার পেলে পুলিশে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন, দুদকে বিল্ডিং করে দেবেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। উনি কী টাইপের মানুষ আমরা বুঝি না। তবে উনি দায় এড়াতে পারেন না। উনার সঙ্গে ভুয়া এডিশনাল সেক্রেটারি কাদেরের যে সম্পর্ক, এর দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। কারণ উনার ছবি দেখিয়ে কাদের বিভিন্ন মানুষকে ঠকিয়েছেন।
মুসা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কাদের নাকি তাকে বলেছেন, উনার (কাদেরের) সঙ্গে আইজিপিসহ বড় বড় মানুষের সম্পর্ক আছে। তাই তিনি কাদেরকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু আইজিপিকে বা অন্য দফতরে ফোন করে এসব ক্রসচেক করা উচিত ছিল। কাদের মাঝির সঙ্গে উনার (মুসা) একটা যোগসূত্র রয়েছে।
হারুন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেছেন যে তিনি নিজেই প্রতারিত হয়েছেন। উনি নিজেও নাকি কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। আমরা সবকিছু তদন্ত করছি। আমরা যেটা করার দরকার সেটাই করবো। উনি মামলা করলে সেটাও আমরা তদন্ত করব।
মুসার সম্পদের বিষয়ে হারুন বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে উনি (মুসা) অন্তসারশূন্য। একটা ভুয়া লোক মনে হয়েছে। উনার কিচ্ছু নাই। তার একটা বাড়ি রয়েছে গুলশানে। সেটাও স্ত্রীর নামে। বাংলাদেশে তার নামে আর কিছু পাইনি আমরা। তবে উনি মুখরোচক গল্প বলেন।
উনি আরেকটা কথা বলেন, এদেশে যা উন্নয়ন হয়েছে সব উনার অবদান। উনার সঙ্গে আর কী কথা বলব। উনি খামখেয়ালিভাবে কথা বলেছেন। এই কথাগুলো আবার কাদের বিক্রি করেছেন।
আগেরবার মুসার সাথে বডি গার্ড দেখা গেলেও এবার কেন দেখা যায়নি? জানতে চাইলে হারুন বলেন, আমরা বলে দিয়েছিলাম, ভেতরে কোনো বডিগার্ড নিয়ে আসা যাবে না।
সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব পরিচয়দানকারী আবদুল কাদের নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতেই মুসা বিন শমসেরকে আজ ডাকা হয়েছিল ডিবি কার্যালয়ে। সে আজ বিকেল ৩টার পর ডিবি কার্যালয়ে হাজির হন মুসা, তার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী, ছেলে জুবেরী হাজ্জাজ। প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের।
আবদুল কাদের নিজেকে মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিতেন।