“সাবধান” স্বার্থের জন্য কারও কাছে বন্দী হচ্ছেন না তো?

জেসমিন নাহার

কেউ যদি উদ্দেশ্য হাসিল করতে আপনাকে ব্যবহার করে তবে সেটা বোঝার উপায়ও রয়েছে। নিজে ব্যবহার হতে চাইলে অন্য কথা। তবে কেউ যদি নিজের স্বার্থে আপনাকে ব্যবহার করে সেজন্য সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এই পরিস্থিতে বিপদও হতে পারে।

Islami Bank

‘ম্যানিপুলেইট’ বা নিজ উদ্দেশ্য সাধনে অন্যকে কাজে লাগানোর ঘটনা- স্বামী স্ত্রীর, বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যে কেউ করতে পারে।

আরও পড়ুন…রোনালদোকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস মেসির

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মানসিক স্বাস্থ্যের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘রিয়েল ডটকম’য়ের প্রধান চিকিৎসক র‌্যাচেল হফম্যান বলেন, “কারও গতিবিধিকে প্রভাবিত করা, নিয়ন্ত্রণ করা বা ‘ম্যানিপুলেইশন’ নানানভাবে হতে পারে। আর সেই রকমফেরগুলো বোঝার উপায়ও রয়েছে।”

‘ম্যানিপুলেটিভ বিহেইভিয়ার’য়ের লক্ষণ:

মিথ্যা বলা, অপরাধবোধে ফেলা, নিজে ত্যাগ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানো, ‘সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট’, পরোক্ষভাবে রাগ দেখানো ইত্যাদি কারও আচরণ বা কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার লক্ষণ। এই মানুষগুলো কাউকে ‘ম্যানিপুলেইট’ করার জন্য হুট করেই যেমন প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ হয়ে যেতে পারে, আবার পরক্ষণেই আবেগহীন নিষ্ঠুর হয়ে উঠতেও দেরি হয় না।

‘ম্যানিপুলেইটিভ’ এই মানুষগুলো একজন মানুষের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ক্রমেই দূরে সরিয়ে আনতে থাকে। এরা মানুষের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টায় সদা সচেষ্ট। অপমানজনক মন্তব্য ও ঠাট্টার ছলে তারা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়। তারা মানুষকে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে রাখে।

কারা সহজেই ‘ম্যানিপুলেইশন’য়ের শিকার হয়:

যে মানুষগুলো সম্পর্কির সীমারেখা খুব একটা বজায় রাখতে পছন্দ করে না, অপরের প্রতি সহমর্মীতা যাদের অনেক বেশি, আত্মবিশ্বাস যাদের অনেক কম, তারাই সহজে অপরের ‘ম্যানিপুলেইশন’য়ের শিকার হন। সহমর্মীতা খুবই ভালো গুণ। তবে তা একজন মানুষের মানসিক সুস্থতাকে কিছু মাত্রায় নষ্ট করে। কারণ ‘ম্যানিপুলেইটর’রা প্রচণ্ড সহমর্মীতা ধারণ করেন এমন মানুষগুলোকেই তাদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়।

আরও পড়ুন…বাংলাদেশকে জ্বালানি সংকটে জরুরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে না চীন

one pherma

যে কোনো পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু দলের মানুষগুলো সংখ্যাগুরু দলের মানুষগুলোর ‘ম্যানিপুলেইশন’য়ের শিকার হয়। এসবক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু দলের মানুষগুলো শুধু মানুষকেই নয়, নিয়মকেও প্রভাবিত করে ফেলে তাদের সংখ্যাগত প্রভাবে জোরে।

যেভাবে বুঝবেন কেউ আপনাকে ‘ম্যানিপুলেইট’ করছে:

জীবনে প্রতিনিয়ত যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন তা যদি নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয় তবে হতে পারে আপনি কারও দ্বারা প্রভাবিত। এই অবস্থায় একটি ঘটনা বারবার আপনি মনে মনে আউড়ে যাবেন, বোঝার চেষ্টা করবেন আসলে ব্যাপারটা কী হলো? আপনার অন্যান্য সম্পর্কগুলো যেমন- পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুমহল ইত্যাদি থেকে যদি ক্রমেই দূরে সরে যেতে থাকেন নিজের অজান্তেই, তাহলে সেটাও একটা শক্ত ইঙ্গিত যে আপনি কারও নিয়ন্ত্রণের শিকার।

যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যদি নিজের মতো করে ভেবেচিন্তে যাচাই করার সুযোগ না পান তাহলেও বুঝতে এর পেছনে অন্যকারও তাড়া আছে। অর্থাৎ কারও মাধ্যমে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। সেই প্রভাবক হয়ত সরাসরি আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে জড়িত নাও থাকতে পারে।

করণীয়:

মানসিক সুস্থতাকে নষ্ট করার জন্য এই ‘ম্যানিপুলেইশন’ অত্যন্ত কার্যকর। তাই যে মানুষগুলোকে আপনি বিশ্বাস করেন তাদের সাহায্য নেওয়াই হবে সবচাইতে নিরাপদ উপায়। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে। খুব কাছের মানুষগুলোও আপনাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইতে পারে, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা বুঝতে পারাটা কঠিন। যে এই কাজ করছে তাকে চেনে না এমন কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলে ভালো পরামর্শ পেতে পারেন।

আরও পড়ুন…ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

‘ম্যানিপুলেইটর’কে শনাক্ত করার পর তার সঙ্গে সম্পর্কের সীমারেখা হওয়া উচিত শক্ত। আর সেই সীমারেখায় ওই ব্যক্তিকে সরাসরি চিনিয়ে দেওয়া ও তা লঙ্ঘন করার পরিণাম বুঝিয়ে দেওয়া জরুরি। স্বভাবতই ‘ম্যানিপুলেইটর’ তার সীমা লঙ্ঘন করে আপনাকে ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ন্ত্রণ পেতে চেষ্টা করে যাবে। তবে সেক্ষেত্রে আবারও তাকে সীমারেখা বোঝাতে হবে।যদি এই চক্র চলতেই থাকে তবে সম্পর্কের ইতি টানাই মঙ্গল হবে।

ইবাংলা/জেএন/২৬ অক্টোবর ২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us