ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ধরতে আবারও ফাঁদ মামলা শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি মাসেই এই ফাঁদ মামলা আবার শুরু হবে। করোনার কারণে গত দুইবছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুদকের ফাঁদ মামলা।
দুদক সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার কারণে এবং স্বাস্থ্যবিধির কারণে দুদকের অধিকাংশ কাজ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু ফাঁদ মামলা করতে হলে সেটি সরাসরি করতে হয়। ঘুষখোর ধরা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যাবলি করতে হয় সরাসরিভাবে। কিন্তু করোনার কারণে যা কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই কমিশন আবারও দুর্নীতিবাজদের ধরতে মাঠে নামছে।
শুধু তাই নয়, ফাঁদ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফাঁদ পেতে ঘুষখোরকে ধরতে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তখন জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপরই দুদকের ‘ফাঁদ’ প্রক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এদিকে কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত ৫ বছরে তথা ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭২ দুর্নীতিবাজকে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ৪ জন। ২০১৬ সালে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৩ জন। ২০১৭ সালে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ জন।
২০১৮ সালে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৫ জন এবং ২০১৯ সালে ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৬ জন। সবচেয়ে বেশি ফাঁদ মামলা পরিচালনা করা হয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু এরপর বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা শুরু হলে সেই ঢেউ বাংলাদেশেও পড়ে। বর্তমানেও বাংলাদেশে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সরকারি অফিসসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন আবার ফাঁদ মামলা শুরু করতে যাচ্ছে যা শুরু হচ্ছে এই মাসেই।
ফাঁদ মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে আটক হওয়া নৌ পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ড. এস এম নাজমুল হক। ঘুষ নেওয়ার সময় দুদক তাকে হাতেনাতে আটক করে। একই বছর দুদকের হাতে আরও আটক হন নৌ পরিবহন অধিদফতরের আরেক প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম এবং চিফ সার্ভেয়ার সাইফুর রহমান। আরও দুদকের হাতে ঘুষের টাকাসহ আটক হয়েছেন কুষ্টিয়ার সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, শেরপুরের সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান ভূঁইয়া, মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মজুমদার মো. মাহফজুর রহমান, কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের রেশনিং কর্মকর্তা বিউটি বেগম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (রাজস্ব সার্কেল-২) উপ-কর কর্মকর্তা আলী আকবর।
দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের ‘ফাঁদ’ কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওই বছরই এটি দুদকের ১৬ নম্বর বিধিতে সংযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্তে আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে হাতেনাতে ধরার উদ্দেশ্যে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনারের অনুমোদনক্রমে তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফাঁদ মামলা (ট্র্যাপ কেস) প্রস্তুত করতে বা পরিচালনা করতে পারবেন।’
এ ছাড়া বলা হয়— ‘ফাঁদ মামলা তদন্ত কার্যক্রম কেবল তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিশনের পরিচালক পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং সরকারি আদেশ পালনে আমরা ফাঁদ মামলা পরিচালনা করতে পারিনি। যে কারণে এই ফাঁদ মামলার বিষয়টি এতদিন বন্ধ ছিল। আমরা বাইরের কাজগুলো করতে না পারলেও অফিসের কাজগুলো ভার্চুয়াল মাধ্যমে মিটিং করে করা হয়েছে। কিন্তু ফাঁদ মামলা যেহেতু ভার্চুয়াল করা যাবে না তাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন থেকে আবার সরাসরি ফাঁদ মামলা পরিচালনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে করোনার অবস্থা বাংলাদেশে ভালো এবং আমরা নিরাপদে রয়েছি। ফলে ফাঁদ মামলার কার্যক্রম এখন থেকে আবার দৃশ্যমান হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা এখন থেকে ফাঁদ পাতলে শতভাগ সফল হবো সেগুলোই শুধুমাত্র আমরা ফাঁদ মামলা পরিচালনা করব। এ ছাড়া যাদের কাছে ঘুষের তথ্য থাকবে তারা দুদকের হটলাইনে ফোন দিয়েও বিস্তারিত জানাতে পারেন।’