হাত বাড়ালেই স্বপ্নের ট্রফি। আর মাত্র একটি ম্যাচ। দরকার একটি মাত্র জয়। শত কোটি ভক্তের চোখ জাদুকরের পায়ের দিকে। লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শেষ হচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপে ২২তম আসরের খেলা। নানা কারণে মাঠের বাইরে বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে সমালোচনার কমতি ছিল না। এছাড়া বড় বড় দলগুলোর হোঁচট, ছোট দলগুলোর দাপটিও খেলা সব মিলিয়ে এবারের আসর ছিল রূপ কথার মতো।
গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালের বাধা পেরিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও বর্তমান কোপা আমেরিকান চ্যাম্পিয়নস আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের যাত্রাটা সহজ হলেও, আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে চাপে পড়েছিল। কিন্তু এরপর কোনো ম্যাচে না হেরে ফাইনালের টিকিট কাটে মেসির দল।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে বিদেশি মদ-গাঁজাসহ যুবক গ্রেফতার
এদিকে ফুটবলের কাছে তার অনেক ঋণ। বিশ্বব্যাপী খেলাটার সৌন্দর্যবর্ধনে লিওনেল মেসি নান্দনিকতার চূড়ায় উঠে সুবাস বিলিয়ে গিয়েছেন। ঠিক যেমনটি করেছিলেন তার পূর্বসূরি দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। প্রয়াত কিংবদন্তির কল্যাণেই গোটা বিশ্বে এত আর্জেন্টাইন সমর্থক। মেসিও একই কাজটি করে গিয়েছেন প্রায় দেড় যুগ হলো। ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো কীর্তি নেই যা ছোঁয়া হয়নি মেসির।
দেশের জার্সিতে মেসি মাঠে নামলেই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েন এই অপবাদ ঘুচে গিয়েছে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের পর। বিশ্বকাপের আগে ইতালিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতেছে লা ফিনালিমিসা। মেসির বড় আক্ষেপ বিশ্বকাপের ঐ সোনালি ট্রফিতে চুমু আঁকতে না পারা। ২০১৪ বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। আজ হয়তো সেই দিন যেদিন থেকে আর মেসির ফুটবল জীবনে আক্ষেপের জায়গা থাকবে না! অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
তবে মেসির বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেবে না তো ফ্রান্স। মরক্কোর বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে পারেননি ফরাসিরা। বরং মরক্কোই ম্যাচ জুড়ে প্রভাব বিস্তারকারী ফুটবল উপহার দিয়েছে। কিন্তু ঐ যে, ফুটবল গোলের খেলা, সেটি না হলে তো ভালো লাভ নেই! মরক্কোর বেলায়ও তাই হয়েছে। শুধু গোল বাদে পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছে মরক্কো!
আর্জেন্টিনার জন্য বড় হুমকি হতে পারেন মেসির পিএসজি সতীর্থ কিলিয়েন এমবাপ্পে। দুই জনেই কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫ গোল করেছেন। দুই জনের সামনেই সুযোগ রয়েছে গোল্ডেন বুটের। তার চেয়েও বড় কথা, এমবাপ্পের ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলে অনেক রেকর্ড গড়ে ফেলবে। ৬২ বছর আগে একমাত্র দেশ হিসেবে পরপর দুই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। সেই রেকর্ডে ভাগ বসাবে ফরাসিরা! শুধু তাই নয়, এমবাপ্পের সামনেও সুযোগ রয়েছে ফুটবলের ‘সম্রাট’ পেলের পাশে বসার।
আরও পড়ুন…বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য কতজন সাক্ষী প্রয়োজন?
গত বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনার সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপের কোনো মিল নেই। এই দলটি মেসির ওপর অতটা নির্ভরশীল নয়। যার প্রমাণ তো সেমিফাইনালেই দেখা গিয়েছে। হুলিয়েন আলভারেজের মতো তরুণ তুর্কি রয়েছেন যিনি ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। মেসির পাস পেলে তিনি যে নায়ক হয়ে উঠবেন সেটি প্রমাণিত। তাই ফরাসিরা শুধু মেসির পেছনে লেগে থাকলে কৌশলগত ভুল করে ফেলবে!
কাতার বিশ্বকাপে নিজের সম্ভাব্য যা করার সবই করছেন মেসি। কখনো নিজে গোল করছেন আবার কখনো গোল করাচ্ছেনও। কখনো মারাদোনো, কখনো গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে টপকে যাচ্ছেন মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মাঠে দৌড়ান না, বলের জন্য অপেক্ষা করেন, যারা এমন কথা বলেছিলেন তারা মেসিকে তাঁতিয়ে দিয়েছিলেন। ফলটাও হাতে নাতে পেয়েছে! মেসি হেঁটে হেঁটে বিশ্বকাপের ফাইনালে এসেছে, তারা দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে বসে আছে!
নম্র-ভদ্র মেসিকে দেখেই অভ্যস্ত ফুটবল দুনিয়া। কিন্তু নেদারল্যান্ডস ম্যাচে মেসি সংহারমূর্তি রূপ দেখেছিলেন ডাচ্রা। অনেকটা আগ্রাসি ভূমিকায় ছিলেন। এখান থেকে ছবিটা পরিষ্কার মেসি বিশ্বকাপ জিততে কতটা মরিয়া।
ফাইনাল জিততে রণকৌশল সাজাচ্ছেন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন। এবার চ্যাম্পিয়ন হলে দুই বার কোচ হিসেবে বিশ্বজয়ের স্বাদ পাবেন দেশম। সে পথে তার জন্য বড় বাধা মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে নিয়ে চারদিকে এত কথা হচ্ছে যে, দেশম বলেই ফেললেন কিছু ফরাসিও চান মেসির হাতে উঠুক বিশ্বকাপ ট্রফি, ‘আমি জানি আর্জেন্টিনার বিশ্বব্যাপী অনেক সমর্থক এবং সম্ভবত কিছু ফ্রেঞ্চও আশা করে যে, এবার লিওনেল মেসি যেন বিশ্বকাপ জিততে পারে।
আরও পড়ুন…ইবাংলার সম্পাদক ইস্রাফিলকে ফের হত্যার হুমকি
তবে আমরা শিরোপা জিততে সম্ভাব্য সব কিছু করব।’ এর আগে বিশ্বকাপে দু্ই দলের প্রথম দেখা হয় ১৯৩০ সালে বিশ্ব ফুটবলের প্রথম আসরে। আর দ্বিতীয় দেখা ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে। দুই আসরেই আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়েছিল ফরাসিরা। তবে সব শেষ গত বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর খেলায়া আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারায় ফ্রান্স। সব মিলিয়ে দুই দলের ১২ খেলায় আর্জেন্টিনা জিতেছে ৬ ম্যাচ। আর ফ্রান্স জিতেছে ৩ ম্যাচ। বাকি ৩ ম্যাচ ড্রয়ের খাতায় যোগ হয়েছে।
ইবাংলা/জেএন/১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.