তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান দেশটিতে নিযুক্ত আমেরিকাসহ ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রাষ্ট্রদূতরা জেলবন্দী ওসমান কাভালা নামে সুশীল সমাজের একজন নেতার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
এসব রাষ্ট্রদূতদের সাতজনই ন্যাটো জোটে তুরস্কের মিত্র দেশের। যদি এ বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হয় তবে পশ্চিমা দেশগুলো এবং ১৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগানের মধ্যে বড় ধরনের একটি ফাঁটল দেখা দিতে পারে।
শনিবার এরদোগান বলেন, ‘আমি ওই দশজন রাষ্ট্রদূতকে যত দ্রুত সম্ভব অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি।’ তবে তিনি এ বিষয়ে সময় নির্দিষ্ট করে দেননি।
একজন জনহিতৈষী হিসেবে পরিচিত ওসমান কাভালা ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে আছেন। ২০১৩ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভে অর্থ সরবরাহ এবং ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে তার জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
তার মুক্তির জন্য গত সপ্তাহে যৌথভাবে একটি বিবৃতি দেয় আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ১০ জন বিদেশী রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তাদের ওই বিবৃতি নিয়ে অসন্তোষ জানায়।
ইউরোপের প্রধান মানবাধিকার নজরদারি সংস্থা কাউন্সিল অফ ইউরোপ তুরস্ককে দেয়া এক চূড়ান্ত সতর্ক বার্তায় বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত ওসমান কাভালাকে মুক্তি দেবার দাবি জানায়।
শনিবার এরদোগান এসকিসেহির শহরে জনতার উদ্দেশে এক ভাষণের সময় বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতরা তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে নির্দেশ জারির সাহস দেখাতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি এবং বলেছি কী করতে হবে। এই ১০ জন রাষ্ট্রদূতকে অবিলম্বে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। আপনি অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন।’
তবে বাস্তবে কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এরদোগান বলেছেন, রাষ্ট্রদূতদের তুরস্কের বাস্তবতা বুঝতে হবে, নয়তো তুরস্ক ছেড়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রদূতদের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত সেরকম কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছে, তার রাষ্ট্রদূত এমন কিছু করেননি যে কারণে তাকে বহিষ্কার করতে হবে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, তিনি ১০ জন বিদেশী রাষ্ট্রদূতের কূটনৈতিক মর্যাদা ও অধিকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূতদের তলব করে এবং কাভালা ইস্যুতে তাদের দেয়া বিবৃতিকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে প্রতিবাদ জানায়।
রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতিতে ওসমান কাভালাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ‘অব্যাহত বিলম্বের’ সমালোচনা করা হয় এবং বলা হয়, এই দীর্ঘসূত্রিতা ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং তুরস্কের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে।’
বিবৃতিতে কাভালাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ওসমান কাভালাকে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, কিন্তু তার পরপরই আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তাকে খালাস দেয়ার রায় নাকচ করে দেয়া হয় এবং ২০১৬ সালে এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনা হয়।