সারা বছর দেশে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে তার অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজানে। আমদানি সংকটে এ বছর বেশ আগে থেকেই চড়া খেজুরের বাজার।
চিনি, ছোলা, বেসনসহ রমজানে প্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের দামও বাড়তি আগের থেকে। মাস দেড়েক পর রোজায় খেজুরের চাহিদা বাড়লে কিনতে হতে পারে আরও বাড়তি দামে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেজুরের আমদানি ব্যয় বেশি। সরবরাহ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ বছর পণ্যটি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আমদানি হয়নি। রমজানের জন্য খেজুরের এলসি খোলার সময়ও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে সারা বছর খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন। রমজানে ৫০ হাজার টন। কিন্তু এ বছর আমদানি বেশি কমেছে।
বিগত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে ২২ হাজার ৭শ টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি ছিল ৪০ হাজার ৮শ টনের বেশি। অর্থাৎ, এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে এ বছর আমদানি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন…গুনাহের পর ক্ষমা প্রার্থনার সম্পর্কে যা বলেছেন নবিজি (সা.)
আমদানি বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশে খেজুরের সবচেয়ে বড় চালান আসে ইরাক থেকে। এজন্য প্রায় একমাস সময় লাগে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা খেজুর চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ঢোকে দেশে। মিশরের অল্প কিছু খেজুর আসে প্লেনে। তাই রমজানের জন্য এরই মধ্যে খেজুরের এলসি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সার্বিকভাবে এ বছর খেজুর খুব কম আমদানি হচ্ছে।
সারা বছর দেশে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে তার অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজানে। আমদানি সংকটে এ বছর বেশ আগে থেকেই চড়া খেজুরের বাজার। চিনি, ছোলা, বেসনসহ রমজানে প্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের দামও বাড়তি আগের থেকে। মাস দেড়েক পর রোজায়
আরও পড়ুন…সারাহ ইসলাম নামে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের উদ্বোধন
তিনি বলেন, ইরাকসহ প্রায় সব দেশে খেজুরের দামও প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি নভেম্বর-ডিসেম্বরে যখন এসব এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি হয় তখন ডলারের রেট অনেক বেশি ছিল। এসবের প্রভাব পড়েছে খেজুরের দামে।
শামসুল হক বলেন, দাম ও খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় অনেকে এ বছর খেজুর আমদানি করেনি। আবার বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের খরচও অনেক বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ফলের বিক্রিও কমে গেছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ।
ফলে খেজুরের চাহিদাও কম থাকার আশঙ্কা রয়েছে। রোজায় অবশিষ্ট থাকলে সেসব খেজুর চড়া ব্যয়ে সংরক্ষণ করা হয় হিমাগারে। সেজন্য এখনই চড়া দামে খেজুর এনে ঝুঁকি নিতে চাননি অনেক আমদানিকারক। সবমিলে এ বছর খেজুরের বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল।
আরও পড়ুন…এবার নতুন গান নিয়ে আসছেন মাহতিম সাকিব
ব্যবসায়ীরা জানান, ইরাক ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকেও বাংলাদেশে খেজুর আসে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইরাকের জাহেদি খেজুর, যা বাংলা খেজুর নামে গ্রামগঞ্জে কেজি দরে বিক্রি হয়।
এ পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে খেজুরের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে সাধারণ মানের খেজুরে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ইরাকের ‘জাহেদি’ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা কেজিতে। আর ভালো মানের খেজুরের দাম বেড়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি তিনশ টাকা পর্যন্ত।
বাদামতলী ফল বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাহেদির পর বেশি আসে আমিরাত গোল্ড। আমিরাত থেকে আসা এই খেজুর পাইকারি বাজারে দুইশ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নাগাল, দাবাস ও লুলু খেজুরও রয়েছে আমিরাতের। সেগুলো পাইকারি আড়াইশো থেকে তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এ কয়েকটি জাত আগের বছরের চেয়ে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়তিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন…নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় সাহাবুদ্দিনকে আবদুল হামিদের অভিনন্দন
সারা বছর দেশে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে তার অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজানে। আমদানি সংকটে এ বছর বেশ আগে থেকেই চড়া খেজুরের বাজার। চিনি, ছোলা, বেসনসহ রমজানে প্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের দামও বাড়তি আগের থেকে। মাস দেড়েক পর রোজায়
বাদামতলী কুমিল্লা ফল ভান্ডারের জিয়াদুল হক বলেন, ইরাকি ও আমিরাতের খেজুরে বাড়তি একশ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সৌদি আরব থেকে আজওয়া, আম্বার, কালমি এবং ইরান ও জর্ডান থেকে মরিয়ম খেজুর আসে। মিশর থেকে আসে বড় আকারের খেজুর মেডজুল। এগুলোতে তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
জানতে চাইলে সাথী ফ্রেশ ফ্রুটসের কর্ণধার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইরাকে এ বছর খেজুর উৎপাদন হয়েছে কম। সেখানে দাম বেড়েছে। ওই খেজুরই কম দামে গ্রামগঞ্জের মানুষের চাহিদা পূরণ করতো। সেজন্য দাম বাড়ছে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় ৭০ হাজার টাকা অর্থদন্ড
‘সরবরাহ কম থাকায় আমদানি ও পাইকারি পর্যায়ে যতটুকু দাম বেড়েছে, তারচেয়েও বেশি দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারের ১২০-১৫০ টাকার খেজুর খুচরা বাজারে গিয়ে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেটা মনিটরিং প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, আমদানিকারকরা খেজুরগুলো এনে কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণ করেন। সেখান থেকেই বিক্রি করা হয়। বাদামতলীর পাইকারি বাজারে বড় বড় কার্টনে বিক্রি হয়। তখনও দামের ব্যবধান ঠিক থাকে।
কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করেন। বাদামতলীর পাইকারি বাজারে দুই হাজার টাকায় পাঁচ কেজির একটি আজওয়া খেজুরের বক্স কিনে তারা প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি করতে চায়।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে ইঁদুরের ফাঁদে তরুণের মৃত্যু
মৌসুমি ট্রেডার্সের মালিক তারেক আহমেদ বলেন, এখন সারা বছর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ খেজুর খাচ্ছে। সে কারণেও দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগে দামি খেজুরের ক্রেতা ছিল না। এখন আনলাইনেও প্রচুর খেজুর বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম।
ইবাংলা/ জেএন/১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.