অতিবাহিত হলো মহিমান্বিত মাস রমজান। মাসব্যাপী রোজা রেখে শোধিত হলো পাপাচার। অর্জিত হলো আত্মশুদ্ধি, সঞ্চিত হলো সংখ্যাতীত নেকি, সমৃদ্ধ হলো পরকালের তহবিল। মাসব্যাপী রোজা মানুষকে করলো সংযমী এবং মানুষের মাঝে আনলো শৃঙ্খলা।
রোজার এই সংযম ও শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে সারাবছর। তাহলে রোজায় অর্জিত শিক্ষা অবশিষ্ট এগারো মাস কাজে দেবে। এছাড়া রোজায় অর্জিত শিক্ষার প্রতিফল অবশিষ্ট এগারো মাস পেতে করণীয় হলো- রমজানের পর অন্য মাসেও নফল রোজা রাখা।
আরও পড়ুন… আদনান ওকতার নামে সেই ‘ধর্মগুরুর’ ৮,৬৫৮ বছরের কারাদণ্ড
রমজানের ফরজ রোজার পর শাওয়াল মাসের ছয় রোজার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। যা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যারা রমজানের রোজা রেখেছে তারা পরবর্তী মাস শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখলে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুল (স.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। তাই সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো। তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি ১৫৩৪)
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর ধরেই রোজা রাখল। (মিশকাত ১৭৯)
রমজানের ত্রিশ এবং শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার দ্বারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়- বিষয়টি কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কেউ নেক কাজ করলে মহান আল্লাহ তার প্রতিদান দশগুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে। (সুরা আনআম ১৬০)
আরও পড়ুন… মহানবী (সা:)-এর জীবনী পড়ে ইসলাম গ্রহণ
এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজা দশ মাস রোজা রাখার সমতুল্য আর শাওয়ালের ছয় রোজা দুই মাসের সমতুল্য। এই হলো মোট এক বছরের রোজা। (নাসায়ি ২৮৬০)
এই বিষয়টির বিশ্লেষণ হলো, রমজানের ৩০ দিন আর শাওয়ালের ৬ দিন মিলে মোট রোজা হয় ৩৬ দিন। ৩৬ এর দশ গুণ হলো ৩৬০ দিন। আরবি দিনপঞ্জির হিসাবে ৩৬০ দিনে এক বছর পূর্ণ হয়।
শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা যাবে ঈদুল ফিতরের দিন ব্যতীত মাসের অন্য যেকোনো দিনে। এই ৬ রোজা একনাগাড়ে রাখা উত্তম। তবে সুবিধামতো দুয়েকদিন বিরতি দিয়েও রাখা যাবে। কারো যদি রমজানের রোজা কাজা হয়ে থাকে এবং শাওয়ালের নফল রোজাও রাখতে চায় তাহলে উত্তম হলো প্রথমে রমজানের কাজা রোজা আদায় করা। এরপর শাওয়ালের নফল ৬ রোজা রাখা। তবে রমজানের কাজা রোজা থাকা অবস্থায় শাওয়ালের ৬ রোজা রাখলে তা আদায় হয়ে যাবে।
ইবাংলা/এইচআর/২৭ এপ্রিল ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.