নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কায় সতর্ক মাঠ প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সহিংসতা এড়াতে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করেছেন তারা। বিশেষ করে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগে নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়।
মাঠ প্রশাসনের বক্তব্যের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো না থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের হুশিয়ারিও দেন সিইসি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থকদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেমবর) দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনাসভায় অংশ নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কার পাশাপাশি হুশিয়ারির কথা জানানো হয়। ভারর্চুয়াল আয়োজিত সভায় ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের পরিচালনায় সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বিভাগীয় কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।
- বৈঠকে আট বিভাগের মাঠ প্রশাসনের প্রায় সব শীর্ষ কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের প্রস্তাব করেন। তারা বলেন, তাদের এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। অন্য কোনো এলাকা বা কেন্দ্রীয় কোনো রিজার্ভ ফোর্স থেকে সেই ঘাটতি পূরণের প্রস্তাব করেন তারা। একই ধাপে এত সংখ্যক ইউপির তফসিল না দেওয়ার প্রস্তাবও করেন তারা।
সভাপতির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘প্রথম ধাপের নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিন্তু এর পরে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার কারণে কমিশন উদ্বিগ্ন। অবশ্য আপনাদের বক্তব্যে কমিশন আশ^স্ত। আশা করি পরবর্তী ধাপগুলোর নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেই। এক ঘণ্টাও বিলম্ব করি না। কোথাও অসুবিধা হলে সমস্যাগুলো আমাদের কাছে আসতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে সেই এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ ভালো না, তা হলে সেখানকার নির্বাচন বন্ধ করে দেব। যদি কোনো প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়, তাহলে তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা আমাদের আছে।’
- রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যারা আছেন তারা পাশে থেকে সাহস জোগাবেন। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে কেউ যাতে পার পেয়ে যেতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ দিতে হবে। কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তারা আইনের আওতায় আসবে এবং এজন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।’
মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ এলে আমরা তা ফাইলবন্দি করে রাখি না। আমরা ব্যবস্থা নেই। নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হবে। জাতীয় নির্বাচনের থেকে এ নির্বাচন আলাদা। এখানে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়।’
উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে দেশের ৩৬৪ ইউপির ভোট হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬ ইউপির ভোট হবে ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে ১০০৩ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
ইবাংলা/জেডআরসি/০৫ নভেম্বর, ২০২১