ক্ষমতার এক কেন্দ্রীকরণ এবং সংসদ ব্যবহার করে জনস্বার্থবিরোধী আইন প্রণয়নে করতে না পারে তার জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন । দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ অনেকটা নিশ্চিত হলেও মডেল নিয়ে খোলাসা করেননি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ।
আরও পড়ুন…থার্টি ফার্স্টে আতশবাজি-পটকা ফোটালেই জেল-জরিমানা
অবশ্য এ দেশের মানুষ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সাথে পরিচিত নয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাড়তে থাকে এই আলোচনা। ২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের জাতীয় আইনসভার প্রায় ৪০ ভাগ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। মূলত অতিমাত্রায় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও অপব্যবহার ঠেকানোই এর উদ্দেশ্য।
বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাকে যৌক্তিক বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণে নিম্নকক্ষের চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স হিসেবে কাজ করে উচ্চকক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারতের মডেলের বাইরে নতুন কিছুও সামনে আসতে পারে। তবে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল জনকল্যাণমূলক না হলে কোনও পদ্ধতিই কাজে আসে না।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বললেন, অন্যায় করে কিংবা জনস্বার্থ পরিপন্থী কোনও কাজ করে তারা যাতে আইন প্রণয়ন করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা এবং সবকিছু নির্ভর করবে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলে। যদি আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সৎ, যোগ্য, জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগ পায়।
দ্বিকক্ষ আইনসভার তিনটি মডেল জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে দু’জন করে সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় উচ্চকক্ষ। যুক্তরাজ্যের বেলায় উচ্চকক্ষ গঠন হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে। আর প্রতিবেশি ভারতের উচ্চকক্ষের সদস্যরা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা, বিধান পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন মডেল বেশি উপযোগী হতে পারে বাংলাদেশের জন্য?
আলী রীয়াজ বললেন, বাংলাদেশে যদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু হয়, তাহলে সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাটা প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটাও যাতে তাতে প্রতিফলিত হয়। দুই পক্ষের ক্ষেত্রে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তৈরি করা যায় কি না, তিনটা মডেলের যে কথা বলা হচ্ছে কোথাও কিন্তু সেটা নেই। ফলে এটাও একটা বিবেচনার বিষয়। ফলে ওই অর্থে আমাদের সামনে চারটা মডেল আছে। আমরা সবগুলো বিবেচনা করে দেখছি। তার কিছু ইতিবাচক দিক আছে, কিছু নেতিবাচক দিক আছে।
আরও পড়ুন…পাহাড়ে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা আসতে পারে, নারীরা-ও। তারপরে আমাদের ধর্মীয়, জাতিগত এই যে যারা সংখ্যালঘু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সমাজের শিল্পী, সাহিত্যিক বিভিন্ন পেশার লোকরা হইতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে পদ্ধতি বদল করেও লাভ হবে না বলে মত আলী রিয়াজের। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ব্যক্তির কল্যাণ, গোষ্ঠীর কল্যাণে যদি রাজনীতি পরিচালিত হয় তাহলে কোনোও কিছুই হবে না। আমাদের যে মনোনয়ন বাণিজ্য, এতে রাজনীতিটা একটা বাণিজ্য হয়ে গিয়েছে। ব্যবসার পরিবর্তে যদি জনগণের কল্যাণে রাজনীতি, এটা যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে পণ্ডশ্রম হবে।
এদিকে, জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য জানিয়েছেন, পদ্ধতি যেটাই হোক, নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই হবে প্রধান কাজ।
ইবাংলা/ বা এ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.