বিপ্লব তো এখানে হয়নি; কার জন্য ঘোষণাপত্র?

সোশ্যাল মিডিয়া

প্রথম কথা হচ্ছে যেকোনো সংগঠন তাদের সংগঠনের আদর্শ-উদ্দশ্য-লক্ষ্য নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র রচনা করতেই পারে। যেমন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে ছাত্রদের নতুন দুটি সংগঠন তৈরি হয়েছে, তারা তাদের সংগঠনের জন্য একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক।

Islami Bank

আরও পড়ুন…দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ: খোলাসা হয়নি মডেল

কিন্তু এখানে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটা হচ্ছে, এই দুই সংগঠন বলছে তারা “জুলাই বিপ্লব” নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র বা আরও সুনির্দিষ্ট করে “Proclamation of July Revolution”! ঘোষণা এবং সরকার দ্বারা অনুমোদন ও সেটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়! এই প্রশ্নের শেষ উত্তর হচ্ছে ” অসম্ভব” আর শুরুর উত্তর হচ্ছে “Revolution” মানে বিপ্লব তা এখানে হয়নি।

এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, কোনো বিপ্লব শুরু হওয়ার আগে বিপ্লবীরা জাতির কাছে বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে একটি ঘোষণা হাজির করে, সেই ঘোষণায় যদি জাতির সমর্থন থাকে তাহলে জনগণ ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে বিপ্লবে রুপান্তর করে সফলতা আনে। গত জুলাই-আগষ্টে বাংলাদেশে সেরকম কিছু ঘটেনি। তবে এখানে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে একটি আন্দোলন হয়েছে।

সেই আন্দোলনের একপর্যায়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত হতাহতের কারনে জনগনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগষ্ট ছাত্র নেতৃত্ব সরকারের পদত্যাগ চেয়ে নতুন করে আন্দোলনের কর্মসুচী ঘোষণা করে। এরপর কি হয়েছে এবং কিভাবে হয়েছে তা এই ছাত্রনেতারা জানেনা।

৫ আগষ্ট দুপুর ১ টা পর্যন্ত ২ কোটি লোকের বিশাল ঢাকা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে সর্বোচ্চ ২০-৩০ হাজার লোক ছিল। এরপর সেনাপ্রধান ২ টায় ভাষন দেয়ার খবর এবং ঠিক তার পর পর প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেছেন এই খবর প্রচারের পর শহরের বসবাসকারী মানুষের একটা অংশ (সর্বোচ্চ ৫-৭ লাখ) রাস্তায় নেমে আসে, অথচ ঢাকায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপিরও সমর্থক আছে কমপক্ষে ৫০ লাখ।

one pherma

আন্দোলনকারীদের একটা অংশ ও সুযোগসন্ধানীরা “বঙ্গবন্ধু যাদুঘর”, “গন ভবন” “সংসদ ভবন” প্রধানমন্ত্রীর কার্যালায়ে আক্রমণ ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে ওঠে। এরমধ্যে সেনাপ্রধান জাতির উদ্দশ্যে ভাষন দিয়ে দেশের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষনা দেন (চাইলে উনি সরকার পরিচালনার দায়িত্বও নিতে পারতেন, সেরকম স্লোগানও শোনা গেছে) এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সেনাসদরে ডেকে পরবর্তী করনীয় কি হবে তা জানিয়ে দেন এবং সে অনুযায়ী আপতকালিন দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সার্বিক সহযোগিতা করে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা সহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত মুল ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন…পাহাড়ে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান

এরকম একটি সরকার আমরা দেখেছিলাম ১/১১’র জেনারেল মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দিনের সরকার যার ২০২৪’র রুপ হচ্ছে জেনারেল ওয়াকার-ইউনুস সরকার, এখানে পার্থক্য হচ্ছে ১/১১’র সরকার ছিল সাংবিধানিকভাবে তত্বাবধায়ক সরকার আর বর্তমানে অসাংবিধানিক আপতকালিন উপদেষ্টা পরিষদ। আন্দোলনের নামে এটা ছিল শুধুই ক্ষমতায় পরিবর্তনের খেলা, আর এরজন্য যে প্রেক্ষাপট দরকার ছিল সুকৌশলে (Meticulosity) সেটাই করা হয়েছিল!

খুব সংক্ষেপে এই ঘটনায় কোথায় বিপ্লব আর তার জন্য কি ঘোষণাপত্র তা আমিতো বুঝিইনা এখন ১৮ কোটি মানুষের কতজন কি বোঝে তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন তৈরি হলো। উল্লেখ্য, আমার এই লেখা কেবলমাত্র “বিপ্লবের অস্তিত্ব” নিয়ে, এটা জুলাই-আগষ্টের মুল ঘটনার বিশ্লেষণ নয়। সেই কাহিনি অনেক দীর্ঘ, জটিল ও ব্যপক। সূত্র: ক্লিক

ইবাংলা/ বা এ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us