বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ (শনিবার, ১৩ নভেম্বর)। ১৯৪৮ সালের এইদিনে নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন এই কথার জাদুকর। বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। একাধারে নাম লিখিয়েছেন নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তার বইয়ের ভাষায় কথার জাদুতে মোহিত হননি এমন বাঙালি পাঠক পাওয়া যাবে না।
ক্যানসার ক্ষণজন্মা এ কথাশিল্পীর জীবন ২০১২ সালে কেড়ে নেয়। তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। তাই হুমায়ূন-মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার আশ্চর্যসুন্দর রচনাবলির মাধ্যমে। হিমু, মিসির আলীর মতো জনপ্রিয় সব চরিত্র সৃষ্টি তাকে জনপ্রিয়তার উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন : কোরআনের ক্যালিগ্রাফি করে তরুণীর চমক
জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা তেমন পছন্দ ছিল না হুমায়ূন আহমেদের। তবু রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে প্রিয়জনদের নিয়ে কাটতেন জন্মদিনের কেক। সকাল হলে ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতেন প্রিয় লেখককে। এ ছাড়া দিনব্যাপী নানা আয়োজন তো থাকতোই। এবারও নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।
জীবদ্দশায় দুই শতাধিক উপন্যাসের জনকের ঝুলিতে রয়েছে ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ অসংখ্য উপন্যাস। তার রচিত ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলী’র মতো অনবদ্য চরিত্রগুলো আজও মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্ম কাছেও এখনও একইভাবে জনপ্রিয়। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’,‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, সর্বশেষ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্য জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন শুধু সাহিত্যেই নয়, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতেও রেখে গেছেন অসীম অবদান। তার নির্মিত সব সিনেমা ও নাটকই হয়েছে নন্দিত। তার রচিত গান হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে অগণিত মানুষের। হুমায়ূন আহমেদ যে ধারা চলচ্চিত্রে ও নাটকে তৈরি করেছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর সেই ধারা এখন প্রায় শূন্য।
জানা গেছে, নানা কর্মসূচির মাধ্যমে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালীতে অবস্থিত হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া স্বপ্নের নুহাশপল্লীতে তার জন্মদিন উদযাপন করা হবে। জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর উদ্যোগে কেক কাটা ও রাতে সহস্রাধিক মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে। হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিষাদ ও নিনিতও নুহাশপল্লীতে বিশেষভাবে স্মরণ করবেন হুমায়ূনকে। সকাল ১০টায় তারা হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কবরের পাশে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ করা হবে।
ইবাংলা/এএমখান/১৩ নভেম্বর, ২০২১