বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজশাহীর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। তিনি বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসান আজিজুল হক আমাদের ছেড়ে চলে যান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন হাসান আজিজুল হক।
গত ২২ আগস্ট অনেক সাহিত্য কর্মের স্রষ্টা হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে রাজশাহী থেকে তখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে হাসপাতালটির পরিচালক জামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
হাসান আজিজুল হকের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান তখন বলেন, ‘আব্বার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।’
এর আগে এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি তার বাবার অসুস্থতার কথা জানান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা। গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওনার পরিচর্যা করতে হয়। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন।’
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায়ে আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’অনেক বছর ধরে তার ঠিকানা।
১৯৬০ এর দশকে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন তার মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ।
১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়।
এর আগে আগস্টের শেষে ইলেকট্রোলাইন ইমব্যালেন্স ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন হাসান আজিজুল হক। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসায় রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
ইবাংলা/ এইচ / ১৫ নভেম্বর, ২০২১