পেঁয়াজ চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য
তাসিন
প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময়ের ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে আমদানি করা হয় পেঁয়াজ। কিন্তু ভারত নানা কারণে গত কয়েক বছর থেকে হঠাত করেই পেঁয়াজ রপ্তারি বন্ধ করে দেয়। এতে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দাম বৃদ্ধি পায়। তাই ওই সময়ে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে গত জুলাই মাসে ১৬ জেলায় গ্রীষ্মকালীন নাসিক রেড এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির সেই প্রকল্পে রংপুরের পীরগাছায় বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশে এই প্রথম অসময়ে চাষ করা পেঁয়াজের এমন ফলনে আশার আলো দেখছে কৃষি বিভাগ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে উত্তোলনের লক্ষে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৫০০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রংপুরের পীরগাছায় কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির ৫০টি প্রদর্শনী করা হয়। এসব প্রদর্শনীতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নতুন এ কার্যক্রমটি দেশের পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং বাজারে পেঁয়াজ সহজলভ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন উপজেলার তালুক ঈশাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের। মাত্র দুই মাস ১০ দিনে তার ক্ষেতের পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। পাতাসহ মাত্র সাতটি পেঁয়াজের ওজন হয়েছে এক কেজি ১৭ গ্রাম।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, প্রথমে নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি অসময়ে পেঁয়াজের চাষ হবে। গ্রীষ্মকালে যে পেঁয়াজ চাষ করা যায় তা কেউ বিশ্বাস করেনি। পেঁয়াজ সাধারণত শীতকালে চাষ হয়। তারপরেও কৃষি বিভাগের লোকজনের কথায় জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করলাম। অসময়ে আবাদ করেও অনেক ভাল পেঁয়াজ হয়েছে। পেঁয়াজ চাষে সাফল্য দেখে আশেপাশের কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারাও আগামীতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘প্রণোদনার আওতায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বীজ ও সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম বলেন, খরা ও অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় পীরগাছায় প্রথম গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উত্তোলন করা হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) শামিমুর রহমান জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন কৃষিতে যুগান্তকারী এক মাইলফলক স্পর্শ করেছে। পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সৃষ্ট পেঁয়াজের সংকট থেকে মুক্তির জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। এতে সফলতা পাওয়া গেছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধি করা গেলে সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
ইবাংলা / এইচ / ২১ নভেম্বর, ২০২১