সুন্দরভাবে কথা বলা এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণকারীকে আল্লাহতায়ালা আপন করে নেন। তাই মহান আল্লাহর পছন্দের তালিকায় নিজের জায়গা করে নেওয়াটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।
ব্যক্তিত্বহীন মানুষের অভ্যাস হলো, অকারণে বকে যাওয়া। বেশি বলাতে যেমন বোকামি প্রকাশ পায়, তেমনি শ্রোতারও বিরক্তির উদ্রেক হয়। তাই অযথা কথা না বলে কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। বাজে কথা এবং বেশি কথা চিন্তাকে ঘোলাটে এবং ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। এডিসন বলেছেন- ‘একজন মানুষ তখনই চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে যখন সে অনর্থক কথা বলা এবং অপকর্ম থেকে বিরত থাকে।’ কেউ যখন অহেতুক কথা বলতে থাকে, তখন এর মাঝে মিথ্যা এবং মন্দ কথাও মুখ থেকে বের হয়।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানা যায়, না তিনি কখনও অহেতুক কসম খেয়ে কিছু বলতেন আর না কখনও কোনো খারাপ কথা বলতেন। -সহিহ বোখারি
নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় জ্বিহবা ও গোপন অঙ্গ গোনাহ হতে বাঁচিয়ে রাখে আমি স্বয়ং তার বেহেশতের জামিন।’ -সহিহ বোখারি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাত ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলে ওঠে, ‘সবসময় আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে আমরাও তোমার অনুবতীর্তা করব।’ কাজেই কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে আন্তরিকতার পরশ থাকে। হজরত ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেন, বান্দা যখন ভালো-মন্দ বিচার না করেই কোনো কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এতদূর গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের সমান। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
এই পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে দু’টো জিনিস দেখা যায়, প্রথমত পশুত্ব আর দ্বিতীয়ত মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্ব পরম ধন। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়েই তা লাভ করতে হয়। প্রবাদ আছে, ‘প্রথম যে দিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে শুধু তুমি, হেসেছিল সবে। এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভূবন।’
যুগ যুগ ধরে মানুষ অমর হয়ে থাকে কেবলমাত্র তার উত্তম কর্মের মধ্য দিয়ে। গর্ব, অহংকার আর বিলাসী জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে নয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিজের কর্মে পুণ্য অবলম্বন করো এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্যের পথ অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যেন কেউ মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে যদি সৎ হয় তাহলে জীবিত থেকে আরও বেশি সৎ কাজ করতে পারবে। আর যদি সে অসৎ হয় তাহলে তার পাপসমূহের জন্য তওবা করার সুযোগ পাবে।’ -সহিহ বোখারি
সুন্দরের মাঝেই মনুষ্যত্বের পরিচয়। মানুষের কথাবার্তা, মনোভাব, আদব-কায়দার মধ্য দিয়েই সুন্দরের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে। তাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালা যা অপছন্দ করেন সেসব কাজ করার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া আমরা যেহেতু শ্রেষ্ঠনবীর উম্মত তাই আমাদের কথাবার্তায় এবং চালচলনেও শ্রেষ্ঠ হওয়া চাই।
ইবাংলা / এইচ / ১ ডিসেম্বর, ২০২১