চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন শাশুড়ি ও জামাই। ওই ইউনিয়নে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন শাশুড়ি সুরোভী ইসলাম ও জামাই এস এম সিরাজুল ইসলাম মান্নু।
এ ইউনিয়নে রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের লড়াইকে ছাপিয়ে ভোটারদের মুখে জামাই-শাশুড়ির চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ সাড়া ফেলেছে। তারাসহ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। বাকি তিন জন হলেন- প্রভাষক মফিজ উদ্দিন, এম ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ও মাওলানা মো. মশিউর রহমান।
নির্বাচনে প্রভাষক মফিজ উদ্দিন নৌকা, এস এম সিরাজুল ইসলাম মান্নু ঘোড়া, সুরোভী ইসলাম মোটরসাইকেল, এম ফরিদুল ইসলাম ফরিদ লাঙল এবং মাওলানা মো. মশিউর রহমান আনারস প্রতীকে লড়ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এস এম সিরাজুল ইসলাম মান্নু বিএনপির প্রেমবাগ ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চাচি শাশুড়ি সুরোভী ইসলাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার সহধর্মিণী। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার আট এবং নারী ভোটার আট হাজার ৮৯১ জন।
আলাপচারিতায় প্রার্থী সুরোভী ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইনে নারী ভোটারদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাকে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন। সাধারণ ভোটারদের মাঝ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। কেননা আমিই প্রথম নারী যে এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছি।’
জামাইয়ের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন, ভোটাররা কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মান্নু আমার ভাসুরের মেয়ের জামাই; অর্থাৎ আমি তার চাচি শাশুড়ি। নির্বাচনে এর কোনও ইফেক্ট পড়বে না। কেননা তিনি এর আগেও একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, গতবার ফেল করেছেন। এবার ভোটাররা আমাকে চাইছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে তার (মান্নু) সঙ্গে আমার ভোট নিয়ে কোনও সমস্যা না হলেও সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে তার ভাই ও কর্মীরা আমার কর্মীদের নির্বাচনি প্রচারে বাধা দিয়েছেন। তারা শাসাচ্ছেন- এমনকি ভোটের পরে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।’
শাশুড়ির আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জামাই এস এম সিরাজুল ইসলাম মান্নু বলেন, ‘সুরোভী ইসলাম হঠাৎ করেই ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) হয়েছেন। গতবার নির্বাচনে আমি সামান্য ভোটে হেরেছি। এবার নির্বাচনের শুরুতেই আমি মাঠে রয়েছি। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে। আশা করছি, জনগণ বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে আমাকে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি; কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছি। উনি (সুরোভী) বিএনপির কোনও পদে বা দায়িত্বে রয়েছেন কি না- সেটি দলের কেউই জানেন না।’
স্থানীয় ভোটারদের দাবি, এই ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের ভোটার বেশি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নৌকার প্রার্থী মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম সিরাজুল ইসলাম মান্নুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রভাষক মফিজ উদ্দিনের পাল্লাটা ভারী। ব্যক্তি হিসেবে দুজনই ভালো।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান একজন শিক্ষিত মানুষ, কলেজের শিক্ষক, সৎ ও মিষ্টভাষী। তাদের মতে, গত পাঁচ বছরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদকে ফুল, ফল ইত্যাদি গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন অন্যরকমভাবে। কাউন্সিল অফিসের ছাদে মনোরম একটি ‘ছাদ বাগান’ করেছেন, প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন ভবনের বাইরের দিক, সামনের খানাখন্দ বন্ধ করে সুন্দর একটি জায়গা করেছেন। তাছাড়া সরকারি যেসব সাহায্য ইউনিয়নে আসে, তার সুষ্ঠু বণ্টনের ব্যবস্থা করেছেন।
ইবাংলা /টিআর /১৪ ডিসেম্বর ২০২১