“চেতনায় বঙ্গবন্ধু”

মো: নাজমুল হুদা

সত্যিই লিখতে খুব বিব্রতবোধ করছি, যার কারনটাও অজানা নয়। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলার দুঃসাহস করাটা আমাদের মত ক্ষুদ্র মানবের এমনটা হওয়া স্বাভাবিক; আর প্রসঙ্গটি যেখানে বাংলা ও বাঙ্গালি জাতির জনক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান”। বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে “আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।”

১৯৪৭ পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগন ছিল শোষিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত। সেসকল বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, সাধারন জনগনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য, বাঙ্গালি জাতির মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর যেকারনে তাকে দীর্ঘ সময় কারাগারে পাড় করতে হয়েছে, মিথ্যা যড়যন্ত্র মামলায় মৃত্যুকেও কর্ণপাত করেননি। যার কণ্ঠদীপ্ত আহ্বানেই অস্ত্রহীন মানুষও যুদ্ধে নেমেছে, দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল এদেশের স্বাধীনতা। পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিল এক খন্ড স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’।

আরোও পড়ুন…শোক হোক সংকট উত্তরণের শক্তি

একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ও ৭ কোটি সর্বস্ব হারানো জনগনকে নিয়ে দেশ পুনঃগঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশপ্রেম ও সৎ সাহস নিয়ে যখন ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নের পথে তখনই একদল স্বাধীনতাবিরোধী-কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে স্বপরিবারে জীবন দিতে হয়েছে এই মহামানবকে। প্রশ্ন হল, আসলেই কি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়েছিল???

বঙ্গবন্ধু হলো সেই নাম যা আমাদের অস্তিত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু হল সেই চেতনা যা আমাদের সার্বভৌমত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু হলো সেই দীপ্তশিখা যা একটি নিরস্ত্র জাতিকে দেশপ্রেমে সুসংগঠিত করে। তাই আমি মনেকরি, বঙ্গবন্ধু হলো সেই প্ররণা যা কোটি মানুষের হৃদয়ে বাস করে। বঙ্গবন্ধু হলো সেই জীবনাদর্শ যা আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখায়। বঙ্গবন্ধু হলো সেই অনুপ্রেরণা যা বিশ্বের সকল শোষিত-বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নের পথপ্রদর্শক। তাই এমন চেতনাবোধের মৃত্যু কখনোই সম্ভব নয়। এরা যুগে যুগে আদর্শ হয়ে মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখাবে।

যে বঙ্গবন্ধু আজীবন বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য, গনতন্ত্রের জন্য, সমঅধিকারের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও শোষনমুক্ত দেশ গড়াতে সংগ্রাম করেছেন; ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু পথভ্রষ্ট ও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের নিকৃষ্ট হত্যাকান্ডে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তর পরবর্তীতে তার এ শূন্যতা বাঙ্গালির স্বাধীন সত্ত্বাকে ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নকে বাধাগ্রস্থ করেছে। তবে সময়সাপেক্ষ হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৫আগস্ট হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করে বাঙ্গালিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন এবং সোনার বাংলা গড়তে ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাঙ্গালি জাতির মুক্তির অন্যতম অগ্রনায়ক, বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে সর্বদা হৃদয়ে ধারন করে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শুধু কোন দেশ বা গেষ্ঠীর নেতা ছিলেন নাহ, তার বিপ্লবী চেতনা, দর্শন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল তার সমকালীন সকল বিশ্বনেতাদের সমতুল্য। তাই আমাদেরকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ, মহত্ত্বকে ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরতে চেষ্টা করতে হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে নাহ, বঙ্গবন্ধু মানেই হল বাংলাদেশ। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বেঁচে থাকবেন আমাদের আদর্শ ও চেতনায়।

লেখকঃ
মোঃনাজমুল হুদা,
শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মী

নাজমুলবঙ্গবন্ধু