পরিবেশ দূষণকারী প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও প্রসারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি সূর্যের আলো থেকে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। এটি পরিবেশ বান্ধব এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দিন দিন সৌর প্যানেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে কৃষি কাজে খাদ্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষিতে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সৌর বিদ্যুৎ প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সৌর বিদ্যুৎ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি
১৮৩৯ সালে হালকা এক্সপোজার থেকে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরির জন্য কিছু উপকরণ কাজে লাগান ও পর্যবেক্ষণ করেন আলেকজান্দ্র-এডমন্ড বেকারেল।যদিও তখনকার সোলার প্যানেলগুলি সাধারণ বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলির জন্য খুব অকার্যকর ছিল। তবে এটি আলোক পরিমাপের সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
বেকারেলের দ্বারা পর্যবেক্ষণটি ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত পুনরায় তৈরি করা হয় না। এরপর উইলবিবি স্মিথ যখন আবিষ্কার করেছিলেন যে, হালকা আঘাতের কারণে সেলেনিয়াম চার্জ হতে পারে। স্মিথের এই আবিষ্কারের পরে, উইলিয়াম গ্রিলস অ্যাডামস এবং রিচার্ড ইভান্স ডে ১৮৭৬ সালে “সেলেনিয়াম অন লাইটের অ্যাকশন” প্রকাশ করেছিল৷ তারা স্মিথের ফলাফলকে প্রতিরূপ করতে ব্যবহৃত পরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছিল।
১৮৮১ সালে, চার্লস ফ্রিটস প্রথম বাণিজ্যিক সৌর প্যানেল তৈরি করেছিলেন। তবে এই সৌর প্যানেলগুলি বিশেষত কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় খুব কম উন্নত ছিল। ১৯৩৯ সালে, রাসেল ওহল সৌর সেল ডিজাইন তৈরি করেছিলেন যা এখন অনেক আধুনিক সোলার প্যানেলে ব্যবহৃত হয়। তিনি ১৯৪১ সালে তার নকশা পেটেন্ট করেছিলেন।১৯৫৪ সালে, এই নকশাটি প্রথম বেল ল্যাবস বাণিজ্যিক ভাবেটেকসই সিলিকন সোলার সেল তৈরি করতে ব্যবহার করেছিলেন।
সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০১৩ থেকে জানা যায়,
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫% এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০% বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাময় উৎস সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মি আটক, ৮ পুলিশ আহত
উক্ত কর্মসূচির আওতায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্প (যেমন সোলার পার্ক, সোলার মিনিগ্রিড, ডিজেল চালিত সেচ পাম্পসমূহকে সৌর শক্তি চালিত সেচ পাম্প দ্বারা প্রতিস্থাপন) এবং সরকারি অনুদানে বাস্তবায়িতব্য সামাজিক প্রকল্প (যেমন গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র সমূহে সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন, প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সৌর বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি) বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাপী এটি স্বীকৃত যে, শুধু ক্ষয়িষ্ণু জীবাশ্ম জ্বালানি উৎসের উপর নির্ভর করে টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয় ।
আমাদের দেশেও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় গ্যাসের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতা কমিয়ে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কয়লা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তঃদেশীয় বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ আমদানীর নতুন দ্বার ইতোমধ্যেই উন্মোচিত হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ঘোষিত দক্ষিণ পূর্ব এশিয় দেশ সমূহে ৩০০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রাথমিক ধারণা পত্রটি গত জুন, ২০১১ মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এশিয় সোলার এনার্জি ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ হতে আমি উপস্থাপন করি। যা সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।”
আরও পড়ুন…আপন ভাই ও তার স্ত্রী সন্তানদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ !
ডিজেলও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকারকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এটা একদিকে যেমন পরিবেশ বান্ধব অন্যদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষক খাদ্যশস্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে।
সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ বেশিরভাগ সময় থাকেনা বললেই চলে।আমাদের গ্রামাঞ্চল তো, কোন সময় বিদ্যুৎ পাঁচদিন থাকে, আবার কোন সময় তিনদিনও থাকে। কারেন্টের চেয়ে অনেক সুবিধা সোলার পাওয়ারে। কারেন্টে মাসে মাসে বিল দিতে হয়। কিন্তু এটা তো একবারে কেনা যায়। তারপর অনেক দিন থাকে।
অন্যদিকে সরকারের অতিমাত্রায় ডিজেল আমদানির প্রতি নির্ভরতা কমাবে। পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ কৃষক এবং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে সেমিনারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ইবাংলা/জেএন/২৩ আগস্ট,২০২২