যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে

ইবাংলা ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাঁর সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “সমগ্র বাংলাদেশ সফর করে তিনি যে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন তা হচ্ছে সর্বাগ্রে প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। যা সাধ্যমত তিনি করে চলেছেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুপুরে নড়াইলে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেন বিশিষ্ট মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতুর উদ্বোধনকালে ভাষণে একথা বলেন।

আরও পড়ুন…মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্যাতিত জাতিসমূহের মুখপাত্র : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সেতু দুটি উদ্বোধনকালে বলেন, ‘নতুন উদ্বোধন হওয়া সেতু দুটি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাপকভাবে জোরদার করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন এবং আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।এটাই আওয়ামী লীগের ইতিহাস। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার সরকারে এসেই যমুনা সেতুর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে তাঁর সরকার। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করে। যার মধ্যে রয়েছে ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব নদীর ওপরও সেতু নির্মাণ। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, “এখন আমরা দাবি করতে পারি দেশের সমগ্র এলাকার মাঝেই যেন যোগাযোগ স্থাপিত হয় সে কাজ আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ^ ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রসংগ টেনে বলেন, আজকের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন…ত্রুটির কারণে চালুর প্রথম দিনই লেনদেন হয়নি সরকারি বন্ড

তিনি বলেন, প্রথমে কালনা সেতু হিসেবে বর্তমান মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেও এটা যেহেতু মধুমতি নদীর ওপরে নির্মিত এবং মধুমতি নামটিও অনেক মিষ্টি তাই এটার নাম মধুমতি সেতু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদকারী নাসিম ওসমানের নামে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নামকরণ করেছেন। ইতোপূর্বে তাঁর সরকার নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর আরো দুটি সেতু এবং মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান। সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। সেতু প্রকল্পের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের যোগায়োগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সাথে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

আরও পড়ুন…একটু ধৈর্য ধরেন, চলতি মাসটা কষ্ট করতে হবে: প্রতিমন্ত্রী

এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমাদের ঐসব অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরো উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পথ পরিক্রমায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলে আমাদের চট্টগ্রাম এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর একটি আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি এই সেতু দু’টি নির্মাণে সহযোগিতার জন্য আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ জাপান এবং সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার, ইনশাল্লাহ আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ সেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাঞ্জা এবং পাল্টা নিষেধাঞ্জার পরিক্ষেতিতে সবাইকে সাশ্রয়ী হবার আহবান জানিয়ে তিনি সমগ্র দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রেখে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ^ই আজকে কষ্ট ভোগ করছে। সে জন্য আমাদের আবেদন থাকবে-আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই।’

আরও পড়ুন…সারাদেশে বিএনপির সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে

তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে বা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সে অর্থ সমগ্র বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং উন্নত জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক, সেটাই বিশ^বাসীর কাছে আমি আহবান জানাই।’

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমরা সকলে মিলে নিরলস পরিশ্রম করে যাবো, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

ইবাংলা/জেএন/১০অক্টোবর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী