আপনি হয়তো জানেন চীনের বসন্ত উৎসব আসছে। এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপনের জন্য অনেক দিন আগে থেকে চীনারা বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আজ হল বসন্ত উৎসবের আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ছোট বসন্ত উৎসব বা রন্ধন দেবতা দিবস। চীনাদের কাছে বসন্ত উৎসবে এদিন থেকে শুরু হয়।
চীনা চান্দ্রপঞ্জিকার শেষ মাসের তেইশতম দিনে উত্তরাঞ্চলে ছোট বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হয়। আর দক্ষিণাঞ্চলে হয় চব্বিশতম দিনে। এদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রন্ধন দেবতার পূজা করা। চীনা সংস্কৃতিতে রন্ধন দেবতা ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। ছোট বসন্ত উৎসবের দিন তিনি স্বর্গীয় রাজার কাছে গিয়ে পরিবারের অবস্থা রিপোর্ট করেন।
আরও পড়ুন…কবিরহাটে টিউবওয়েলে উঠছে পানি ও গ্যাস, জ্বলছে আগুন
রাজার কাছে তিনি অনেক ভালো কথা বলেন এবং নতুন বছরে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য মানুষজন তার জন্য শ্রদ্ধানিবেদন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কাহিনী অনুসারে দেবতা ‘থাংকুয়া’- যা এক ধরনের মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। তাই পূজা অনুষ্ঠানে লোকজন বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার উৎসর্গ করবে। বর্তমান শহরের পরিবারগুলো প্রায় রন্ধন দেবতার পূজা করে না, তবে এদিন মিষ্টি খাওয়ার রীতি প্রচলিত হয়েছে।
ছোট নববর্ষের পর মানুষ বসন্ত উৎসবের জন্য প্রস্তুতিকাজে ব্যস্ত হবে। যেমন, বাড়িঘর সাজানো, দরজায় বড় বড় অক্ষরে কবিতার ছত্র বা ‘ছুন লিয়ান ও ‘ফু’ অক্ষর এঁটে দেওয়া, দেয়ালে নববর্ষের ছবি টাঙানো, বারান্দায় বা প্রাঙ্গণে লাল লণ্ঠন টাঙানো ইত্যাদি।
এসব কাজ নিয়ে চীনে একটি ব্যাপক প্রচলিত ছড়া আছে:২৩ থাংকুয়া খাওয়া; ২৪, বাড়িঘর পরিষ্কার করা; ২৫ তৌফু তৈরি করা; ২৬ খাসির মাংস সিদ্ধ করা; ২৭, মোরগ রান্না করা; ২৮, পিষে ময়দা তৈরি করা; ২৯ ফাঁপা রুটি বা মান থৌ তৈরি করা; ৩০ মধ্য রাত পর্যন্ত জেগে থাকা।
এই ছড়ায় উল্লেখিত থাংকুয়া, খাসির মাংস বা ফাঁপা রুটি ইত্যাদি খাবার হল ‘নিয়ান হ্য’ বা নববর্ষের পণ্য। অতীতে নববর্ষের পণ্য বলতে প্রধানত খাবার ও পোশাক বোঝাতো, আর যা সাধারণত স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। তবে, বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে নববর্ষ পণ্যের ধরণ আরো বৈচিত্র্যময় হয়েছে; খাবার ও পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিক, ডিজিটাল পণ্য, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি এমনকি গাড়ি নববর্ষের পণ্যে পরিণত হয়েছে। তাই এসময় চীনে ভোগের বাজার সমৃদ্ধ সময়।
মহামারি প্রতিরোধ নীতি শিথিল হওয়ার পর কেনাকাটা ছাড়া এসময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। যেমন, চলতি বছর ছোট বসন্ত উৎসব থেকে লণ্ঠন উৎসব পর্যন্ত বেইজিংয়ে বসন্ত উৎসব মন্দির মেলা, লণ্ঠন উৎসব, বসন্ত উৎসব গালা, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য প্রদর্শনী, অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প অভিজ্ঞতা কার্যক্রম ইত্যাদি প্রায় ১০০০ ছোট বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন…১৪০০পিস ইয়াবাসহ ৩ মাদক কারবারি গ্রেফতার
মানুষ এতে ভালোভাবে বসন্ত উৎসবের রীতিনীতি ও সৌন্দর্য অনুভব করতে পারে। এখন চীনের বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা যায়। আবহাওয়া শীত হলেও চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, মানুষের জীবন আবারও প্রাণবন্ত হবে। ছোট বসন্ত উৎসবের এই সময় চীনের ছোট বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানাই। আগামী অনুষ্ঠানে আবারও দেখা হবে। সূত্র: তুহিনা, সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/১৪ জানুয়ারি, ২০২৩