আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা অলসতার কারণে ভোরে ঘুম থেকে উঠে জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়তে পারেন না।
ফজরের সময় ঘুম থেকে না উঠতে পারা মারাত্মক একটি মনোরোগ। এর বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার সম্পর্কে দুর্বলতা। তাকওয়ার ঘাটতি। ইবাদত-বন্দেগিতে অলসতা। ইবাদতে দুর্বল ও অলস ব্যক্তিদের সঙ্গে চলাফেরাও হতে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করতে না পারার কারণ।
ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার কিছু উপায় রয়েছে। তাহলো-
(১) ফজরের নামাজ পড়তে উঠার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। ফজরে উঠতে দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে কখনোই রাত জাগা যাবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। যাতে একদিকে ঘুমও পূর্ণ হয়, অন্যদিকে যথাসময়ে ফজরের জন্য উঠা যায়। ইসলামের শিক্ষা মূলত এটা যে, এশার পরপরই ঘুমাতে যাওয়া। বিজ্ঞানও এই অভ্যাসের যথার্থতার প্রমাণ প্রকাশ করেছে।
(২) ফজরের সময় ঘুমের রোগ দেখা দিলে ঠিক ওই মুহূর্তে ভাবতে হবে, এটা তো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়; বরং এটা তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ! আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এমনটাই বলেছেন যে, وَلاَ يَأْتُونَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى
অর্থ: ‘তারা নামাজে আসে অলসতার সঙ্গে, ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে।’ (সূরা: তাওবা, আয়াত: ৫৪)
বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً
অর্থ ‘মুনাফিকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।’ (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)
(৩) জীবনে যারা নেককার, উদ্যমী, আমলকারী ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। অথবা তাদের লেখা ও জীবনী পড়া। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে তাদের জীবন থেকে উত্তম আদর্শ গ্রহণ করা।
(৪) ওজুর সঙ্গে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়া। পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে গেলে ফেরেশতারা ঘুম থেকে জাগার আগ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে।
(৫) ঘুমানোর সময় ডান কাতে ঘুমানো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ঘুমাতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণে ঘুমের জন্য শোয়ার এই অবস্থা একদিকে যেমন ঘুমের জন্য সহায়ক, অন্যদিকে ফজরে যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্যও কার্যকর।
(৬) বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা সাজদাহ, সূরা মুলক, সূরা ইসরা, সূরা যুমার, সূরা কাহফের শেষ চার আয়াত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
(৭) ঘড়িতে একাধিক এলার্ম দেওয়া। আওয়াজ যত বেশি হবে, ততই ভালো! অ্যালার্ম ঘড়ি হাতের কাছে বা বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখা। যাতে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ঘড়ি বন্ধ করতে হয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পাশাপাশি নিদ্রার ভাব কাটার জন্যও সহায়ক হবে।
(৮) পরিবারের অন্য সদস্যদের বলে রাখা। যে আগে উঠবে সে অন্যকে জাগিয়ে দেবে। এভাবে একে অপরকে ফজরের নামাজ পড়তে সহায়তা করবে।
(৯) যে দিন ফজরে উঠতে পারবেন না, সে দিন অন্তরে লাগে পরিমাণ সাদকা করে নিজেকে শাস্তি দিন।
(১০) বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ঘুম দেড় ঘন্টার একটি চক্র অনুসরণ করে। সুতরাং, আপনি যদি দেড় ঘন্টা বা এর গুনিতক সময় যথা তিন ঘন্টা, সাড়ে চার ঘন্টা বা ছয় ঘন্টা ঘুমান, তবে আপনি ক্লান্তিহীনভাবে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন। তা না হলে আপনি যত সময়ই ঘুমান না কেন, আপনার ক্লান্তি দূর হবেনা। সুতরাং, আপনি যদি রাত বারোটায় ঘুমাতে যান এবং ফজরের সময় যদি পাঁচটার দিকে হয়, তবে সাড়ে চারটার দিকে অ্যালার্ম দিন। ঘুমের চক্র পরিপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ক্লান্তিহীন ভাবে আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।
(১১) পরিশেষে আল্লাহর কাছে অলসতা ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার দোয়া করা। নিশ্চিন্তে ফজরের জামাতে ওঠতে পারা তাওফিক কামনা করে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করা। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)
ইয়া আল্লাহ! ফজরের সময় আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইবাংলা/এসআরএস