পিএসজি ছেড়ে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। শনিবার (৩ জুন) ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের হয়ে শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। মেসির বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর এখন নতুন তারকার খোঁজে পিএসজি। মেসি ছাড়াও এই মৌসুমে পিএসজি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সার্জিও রামোস। ক্লাব ছাড়ার কথা নেইমারেরও। তাই ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের আগামী মৌসুমে নতুন করে দল গোছাতে আটঘাট বেঁধে নামতে হচ্ছে মাঠে।
দুই মৌসুম আগে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে লিওনেল মেসিকে দলে ভিড়িয়েছিল পিএসজি। তারও আগে বিশ্বরেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল নেইমারকেও। তবে আশা পূরণ হয়নি তাদের। কাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা আসেনি প্যারিসে। এবার তারার হাট ভেঙে যাচ্ছে উল্টো। মেসি এরই মধ্যে দিয়েছে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা। নেইমারকেও ছেড়ে দিতে চায় ক্লাব। মেসির সঙ্গে যোগ দেওয়া কিংবদন্তি ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসও ছাড়ছেন ক্লাব। আরও কিছু খেলোয়াড়ের এ মৌসুম শেষে দল ছাড়াটা নিশ্চিত। তাই এবারের দল বদলের সময়টা পিএসজির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
লিওনেল মেসির বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর এরই মধ্যে আক্রমণভাগে তার বিকল্প খোজা শুরু করে দিয়েছে পিএসজি। এরই মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের মার্কো অ্যাসেন্সিওর ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পিএসজিতে যোগ দেওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত। দলটিতে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের পর যোগ দেবেন ইন্টার মিলানের ডিফেন্ডার মিলান স্ক্রিনিয়ার। এছাড়া স্পোর্টিং সিপির উরুগুইয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মানুয়েল উগার্তের যোগদানের বিষয়টিও অনেকটাই নিশ্চিত।
আরও পড়ুন:আল হিলালকে অপেক্ষা করতে বললেন মেসি
এই মৌসুমে তারকাসমৃদ্ধ দল নিয়ে নামলেও বেশ কয়েক জায়গায় দুর্বলতা চোখে পড়েছে। তাই নতুন মৌসুমে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আরও বেশ কয়েকজনকে তারকাকে লক্ষ্য বানিয়ে মাঠে নামছে ক্লাবটি।
বের্নার্দো সিলভা।
বের্নার্দো সিলভা: গত মৌসুমেই বের্নারদো সিলভাকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল পিএসজি। কিন্তু আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ম্যানচেস্টার সিটির পর্তুগিজ উইঙ্গারকে দলে ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে এবার সে প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। ম্যানসিটির হয়ে ট্রেবল জয়ের অপেক্ষায় থাকা বের্নার্দো ছাড়তে চান ইংল্যান্ড তাই মেসির বিকল্প হিসেবে তাকে পাখির চোখ করেছে পিএসজি।মার্কো অ্যাসেন্সিও।
মার্কো অ্যাসেন্সিও: রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জেতা শেষ। চলতি মৌসুম শেষেই ফুরিয়ে যাবে তার চুক্তির মেয়াদ। তাই ফ্রি এজেন্ট হিসেবে এই স্প্যানিয়ার্ডের পিএসজিতে যোগ দেওয়াটা নিশ্চিত। ক্লাবটির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিও হয়ে গেছে তার। ২৭ বছর বয়সী অ্যাসেন্সিও মাদ্রিদের হয়ে কাটিয়েছেন দারুণ একটা মৌসুম। তবে নিয়মিত ছিলেন না একাদশে। ২০১৯ সালে এসিএল ইনজুরির পর তিনি আর আগের সেই দুর্ধর্ষ রূপে পুরোপুরি ফিরতে পারেননি। তারপরও পিএসজির স্কোয়াডে একজন দারুণ ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় হতে পারেন তিনি।
রান্ড্যাল কলো মুয়ানি।
রান্ড্যাল কলো মুয়ানি: প্যারিসের বেশ কয়েকটি ক্লাবে খেলার পর গত মৌসুমে বুন্দেসলিগার ক্লাব আইনট্রাখট ফ্র্যাঙ্কফুর্টে যোগ দিয়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। লিগে ১৫ গোল করার পাশাপাশি ১১টি অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। তাই এই মুহূর্তে বড় দলগুলোর রাডারে এই ২৩ বছর বয়সী ফরাসি। প্যারিসের এই মুহূর্তে একজন নম্বর৯ দরকার, আর এমবাপ্পেও জানিয়েছেন তিনি উইংয়ে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ। তাই কোলো মুয়ানি প্রথাগত স্ট্রাইকার না হলেও এমবাপ্পের সঙ্গে গড়তে পারেন দারুণ জুটি।
তবে তাকে দলে ভেড়ানো খুব একটা সস্তা হবে না। ফ্রাঙ্কফুর্ট এরই মধ্যে তার গায়ে ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছে। তবে বর্তমানে দল বদলের বাজারে এই মূল্য পিএসজির মতো ক্লাবের জন্য খুব বেশি কিছু নয়। তাই ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করছে খেলোয়াড়ের ইচ্ছার ওপর।
মার্কাস থুরাম: ২৫ বছর বয়সী থুরামকে এমবাপ্পের সঙ্গে দারুন মানাতে পারে। বরুশিয়া মনচেনগ্লাডবাখের এই স্ট্রাইকারকে পাওয়ায় যাবে বেশ সস্তায়। তার ব্যাপারে খটকা শুধু দুটি বিষয়ে। প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী হলেও থুরাম কখনোই একজন দারুণ স্কোরার নন। বুন্দেসলিগায় চলতি মৌসুমে ১৩ গোল করেছেন তিনি। এটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম। তার মধ্যে থাকা প্রতিভা কাজে লাগাতে পারলে দারুণ এক স্ট্রাইকার পেতে পারে পিএসজি।
খেফরেন থুরাম: নিসের এই ফরাসি মিডফিল্ডারও আছেন পিএসজির রাডারে। গত এপ্রিলে পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচে এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পারফরম্যান্স নজর কাড়ে পিএসজির ম্যানেজমেন্টের। তবে তাকে মানুয়েল উগার্তেকে পেয়ে যাওয়ার পর পিএসজি তাকে ভেড়াবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাছাড়া থুরামকে দলে ভেড়াতে এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুল।
মানু কোনে: খেফরেন থুরামের থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার মানু। একই সঙ্গে পরিশ্রমী ও বল পায়ে দারুণ ড্রিবলার বরুশিয়া মনচেনগ্লাডবাখের এই মিডফিল্ডার পায়ে ধরে রাখতে পারেন বল। এই মৌসুমে ঠিক এমন একজনের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে পিএসজি। তবে থুরামের মতোই তাকে পাওয়াও কঠিন হবে পিএসজির জন্য। লিভারপুলসহ বেশ কয়েকটি ক্লাব তার দিকে চোখ রাখছে।