পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে কয়েকদিনের টানাবর্ষণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে করে রাঙামাটি পৌরসভা ও বাঘাইছড়ি পৌরসভাসহ ২৯টি ইউনিয়নের সর্বমোট ১৯৯টি গ্রামের ৬৫১৪ টি বসতঘরসহ ৪টি আশ্রয়ন ঘর এবং এবারের বন্যায় রাঙামাটিতে ৩৩৬৮.১৫ হেক্টর ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে বন্যা কবলিত হয়ে রাঙামাটিতে ১০ হাজার ৬১৭টি পরিবার এর মোট ৩৯ হাজার ৬২৫ জন নারী-পুরুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাঙামাটিতে চলমান বন্যায় জেলায় ৩৫৭টি স্থানে পাহাড় ধসের মাধ্যমে ৫৯৯টি বসতঘর ও ২৮টি আশ্রয়ন ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন…কৃষি মেলায় নজর কাড়লো বাংলা মার্কের ধান কাটা মাড়াই যন্ত্র
পাহাড় ধসের মাধ্যমে ১৩০১টি পরিবারের ৬৪০৬ জন নারী-পুরুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাহাড় ধসের মাধ্যমে বিভিন্ন সড়কের ৬৯টি স্থানে ক্ষতি, বন্ধ রয়েছে ১২টি সড়ক, ১৬টি ব্রীজ-কালভার্ট, ২১টি বিদ্যুতের খুঁিট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এছাড়াও পাহাড় ধসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১৫৭ টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সর্বমোট ৫৪৩১ জন নারী-পুরুষকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন…বাংলাদেশে অশান্তি চায় বিদেশিরা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে, রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় অভ্যন্তরে ৪১টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়েগেছে। ছোট-বড় ৩৬টি ব্রীজ-কালভার্ট, ১৮টি স্থানীয় বাজার, ২৪টি বিদ্যুতের খুঁটি, ১৪৯টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও এবারের বন্যায় ৯৬৫টি গবাধি পশুকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ১০টি গবাধি পশু মারা গেছে।
কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়িতে বাধ ভেঙে উপজেলার সর্বত্র পানি ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়াও জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে কেউ নিহত না হলেও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানাগেছে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ৪১৮টি ঘর হস্তান্তর
এদিকে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক। বুধবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে পর্যটকরা সাজেকেই অবস্থান করছেন।সাজেকের কুড়েঘর রিসোর্টের মালিক জোতেন ত্রিপুরা বলেন, বর্তমানে সাজেকে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি আটকে আছে। এখানে আটকা পড়া পর্যটকের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে। পর্যটকেরা বর্তমানে যার যার ভাড়া করা রিসোর্টে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন…ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী জাহাজ ডুবে নিহত ৪১
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, সাজেকে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক আটকে রয়েছেন। তারা গতকাল সাজেকে বেড়াতে এসেছেন। বর্তমানে তারা রিসোর্টে অবস্থান করছেন।
আমি বাঘাইহাট জোনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি বাঘাইহাটে পানি কিছুটা কমেছে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা পুরোপুরি ভালো হয়নি। তিনি আরও জানান, অনেক পর্যটক নিজ দায়িত্বে কোনো সময় গাড়িতে ও কোনো সময় নৌকা পার হয়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।