‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন মালিকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সারা দেশের মানুষকে গত তিন দিন ধরে কার্যত জিম্মি করে রেখেছেন পরিবহন মালিকরা। এখন প্রশ্ন উঠছে, রোববার যে ভাড়াতেই সমঝোতা হোক, রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে পরিবহন মালিকশ্রমিকরা তা মানবেন?

ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত দূরত্ব ২ দশমিক ১ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ হার অনুযায়ী এ পথে ভাড়া হয় ৩ টাকা ৫৭ পয়সা; কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা।

শাহবাগ থেকে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হল পর্যন্ত ২ দশমিক ২ কিলোমিটারের সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া হওয়ার কথা ৩ টাকা ৭৪ পয়সা; নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এখন রাজধানীর কোনো রুটেই ১০ টাকার কম ভাড়া আদায় করা হয় না; দূরত্ব যাই হোক। যদিও সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দূরত্বের ভাড়া ৭ টাকা হওয়ার কথা।

  • এ হিসাবে সর্বনিম্ন ভাড়াও কিলোমিটার হিসাবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ। তবুও সবগুলো রুটের বাস আদায় করছে অতিরিক্ত তিন টাকা। যাত্রীদের হাজারো প্রতিবাদ ও বিবাদেও কোনো কাজ হয়নি; ১০ টাকাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে।

ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর কারণে নতুন বাস ভাড়া নির্ধারণে রোববার পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠকের আগে ফিরে আসছে অতীতের অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করছে পরিবহন মালিকরা। এ অবস্থায় বাসের ভাড়া বাড়ালে তা বাস্তবতার নিরিখে হতে হবে।

“আমরা মনে করি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া বাড়াতে হবে। এ ভাড়া যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত যেন কেউ আদায় করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হবে।”

পরিবহন মালিকদের প্রভাবশালী নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহও নগরীর ‘কিছু রুটে’ বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রায়ই ব্যবস্থা নেওয়া হয় দাবি করে তিনি বলেন, “দূরপাল্লার অনেক গাড়ি আছে কম ভাড়াও নেয়। ঢাকা একটু ব্যতিক্রম, এখানে কোথাও কোথাও অনিয়ম হয় সেটা অস্বীকার করার কারণ নেই।“

  • নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের পর কী হবে- সেই প্রশ্নে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এই মহাসচিব বলেন, “আমিও চাই এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে। প্রশাসনের লোক, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে এমন হবে না।”

পরিবহন মালিকদের দাবিতে ভাড়া বাড়লেও তা যেন জনগণের জন্য ‘সহনীয়’ হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার ( ৬ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী দেশে জ্বালানি পাচার রোধে সরকার অনিচ্ছা স্বত্বেও ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে। তবে এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার সবসময়ই জনস্বার্থের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।”

  • সরকার বৃহস্পতিবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর শুক্রবার সকাল থেকে বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো। তারা ভাড়া বাড়ানোর দাবি তোলায় রোববার বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ব্যয় বিশ্নেষণ কমিটি।

ওবায়দুল কাদের ধর্মঘট তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেও বৈঠকের আগে তা তুলতে নারাজ পরিবহন মালিকরা। ফলে সড়কে মানুষের ভোগান্তি থামেনি।

তেলের পাশাপাশি গ্যাসচালিত বাসও বন্ধ রাখা হয়েছে এই ধর্মঘটে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী নাগরিকরা। পরিবহন মালিকরা বলছেন, সিএনজিতে চলে এমন বাসের সংখ্যা ‘খুবই কম’। তাছাড়া গত ছয় বছরে গ্যাসের দাম ১৩ টাকা বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি।

ইবাংলা/ টিআর/ ৭ নভেম্বর/ ২০২১

Comments (0)
Add Comment