দেশে শীতকালীন জনপ্রিয় একটি সবজি হল মটরশুঁটি। এটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমন, এটি কাঁচা ও শুকিয়ে ডাল হিসেবে খাওয়া যায়। অন্যদিকে ভেজে খেতেও বেশ মজার। মটরশুঁটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। শুধু তাই নয় এটি উদ্ভিজ্জ আমিষের একটি বড় উৎস।
আজকাল পারিবারিক অনুষ্ঠানের বিশেষ রান্নার আয়োজনেও পরিপক্ক মটরশুঁটি ডাল হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমাদের দেশে উৎপাদিত মটরশুঁটির একটি বড় অংশ ডাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাপকহারে মটরশুঁটি চাষ করা হচ্ছে।
মটরশুঁটি শীত প্রধান ও আংশিক আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। মটরশুঁটি চাষের সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। মটরশুঁটি চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি বেশ উপযোগী। এঁটেল মাটিতে চারা রোগে মারা যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
আমাদের দেশে চাষ করার মতো মটরশুঁটির বেশ কিছু জাত রয়েছে। এর মধ্যে আরকেল, আলাস্কা, গ্রিন ফিস্ট, স্নো ফ্লেক, বনভিল, সুগার স্ন্যপ নামের জাতগুলোর আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও বারি মটরশুঁটি-১, বারি মটরশুঁটি-২, বারি মটরশুঁটি-৩, ইপসা মটরশুঁটি-১, ইপসা মটরশুঁটি-২, ইপসা মটরশুঁটি-৩, আলাস্কা, সুগার স্নপ ইত্যাদি জাত ব্যাপক জনপ্রিয়।
আমাদের দেশে মটরশুঁটি চাষের উপযুক্ত মাস হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। কারণ এই চার মাসে অনুকূল জলবায়ুগত পরিবেশ বিরাজমান থাকে। তবে নভেম্বর মাসে মটরশুঁটির বীজ বপন করা বেশি ভালো।
অক্টোবর মাসেও বীজ বোনা যেতে পারে। তবে প্রায়ই বৃষ্টি হওয়ার কারণে এসময় জমি তৈরি করা সম্ভব হয় না। তাই সঠিক সময়ে মটরশুঁটির চারা রোপণ করতে হবে। মটরশুঁটির গাছ চারা অবস্থায় অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তাই মটরশুঁটি চাষের জন্য জমি খুব ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এর জন্য ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিতে হবে।
মটরশুঁটির বীজ বপনের পূর্বে বীজ বালাই নাশক দ্বারা শোধন করে নেওয়া উচিত। মটরশুঁটির বীজ সারি করে বপন করা উচিত। জমিতে ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ২০ সেন্টিমিটার পরপর বীজ রোপণ করতে হবে। মটরশুঁটি চাষে জোড়া সারি পদ্ধতিতে চাষ করা ভালো। যদি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থাকে তবে উঁচু স্থানে সারিগুলো তৈরি করতে হবে। জাত ও বপন পদ্ধতি অনুসারে হেক্টর প্রতি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
মটরশুঁটি চাষের জন্য প্রতিশতক জমিতে ৪০ কেজি গোবর সার, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও টিএসপি অর্ধেক জমি চাষের সময় ও বাকি অর্ধেক দুকিস্তিতে পরে দিতে হবে। শেষ চাষে সার প্রয়োগের অন্তত ৭-১০ দিন পরে মটরের বীজ বপন করতে হবে।
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মটরশুঁটির জমিতে শুকনো মৌসুমে কমপক্ষে ২ থেকে ৩টি সেচ দিতে হবে। ফল ধরলে অন্তত একবার সেচ দেয়া জরুরি। নিড়ানি দিয়ে মাঝে মাঝে সারির দুপাশের আগাছা তুলে ফেলে জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সারির মাঝে হালকা কোপ দিয়ে মাঝে মাঝে আগাছা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
মটরশুঁটিতে প্রধানত ড্যাম্পিং অফ, রাস্ট, পাউডারি মিলিডিউ এবং অ্যানথ্রাকনোজ আক্রমণ করে থাকে। এসব রোগ চারা অবস্থায় আক্রমণ করে। ডাইথেন এম-৪৫ প্রয়োগ করে এ সব রোগ দমন করা যায়। পাশাপাশি প্রতি লিটার পানিতে রিডোমিল এম. জেড ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ক্ষেতে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাটুই পোকা চারার গোঁড়া কেটে ফসলের ক্ষতি করে। প্রাথমিক অবস্থায় ভোরবেলায় কেটে ফেলা চারার গোড়ায় চারপাশ থেকে পোকা খুঁজে মেরে ফেলে এ পোকার আক্রমণের প্রকোপ কমানো যায়। এছাড়াও আরও আরও কিছু পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এগুলো দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মটরশুঁটি বীজ বোনার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার ২০ থেকে ২৫ দিন পর বীজের জন্য মটরশুঁটি সংগ্রহ করা যেতে পারে। বীজ পূর্ণ আকারপ্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু শক্ত হয়নি, এ অবস্থায় শুঁটি বা ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
ইবাংলা / নাঈম/ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১