পাহাড়ের উন্নয়নের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে বালির পরিবর্তে পাহাড়ের লাল মাটি । কিন্তু বান্দবানের রুমায় কোনো ঝুঁকি নিরুপণ ছাড়াই চলছে পাহাড় কাটা। আবার সেই পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহৃত হয় রাস্তার উন্নয়ন কাজে বালু হিসেবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়নাধীন কাজে পাহাড় কাটা বালু এক ধরণের লাল মাটিগুলো বালু হিসেবে ব্যবহার করছে। সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলণে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পাহাড়ের বালু ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন নির্মাণ কাজের সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমা উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)‘র বাস্তবায়নে ৯৫লাখ টাকার ব্যয়ে রুমা- রোয়াংছড়ি সড়ক হতে পাইন্দু ইউনিয়ন অফিস (পাইন্দু পাড়া) পর্যন্ত ১কিলো রাস্তার কার্পেটিং কাজে বালুর পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে পাহাড় কাটা লাল মাটি ।
এ রাস্তার বাস্তবায়ন করতে বালু হিসেবে মাটি নিতে গিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে- ছোটবড় পাহাড়। এই পাহাড়ের মধ্য পাইন্দু হেডম্যান পাড়া যাওয়ার রাস্তায়, রুমা -রোয়াংছড়ি সড়কের দুর্ঘটনা কবল ঝুকিপূর্ণ চান্দা পাড়ার টার্নি পযেন্টে সংলগ্ন । ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন একের পর এক পাহাড় কেটে মাটি অপসারণ করে নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সোমবার সকালে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় রুমা -রোয়াংছড়ি সড়কে চান্দা পাড়ায় মোড়ে অধিক ঝুঁকিপুর্ণ ও দুর্ঘটনা কবল রাস্তার টার্নিং পয়েন্টে একটি এ্যাসস্কেভেটর দিয়ে রাস্তার এপার-ওপার দুই দিক থেকে পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কেটে মাটি খুঁড়ে নেয়ায় একটি পাহাড়ের পাশেই সৃষ্ট হয়েছে বড় আকারের একটি গর্ত।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে এ্যাসস্কেভেটর সরে যাওয়ার পর পরই কাটা পাহাড়টির বিশাল মাটি ধসে পড়ে। ফলে মটর সাইকেলে চলাচল কারীদের ঝুকিতে ফেলে দিয়েছে। এছাড়াও সামনে বর্ষা মৌসুমে এ জায়গাটি ধসে পড়ে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্তসহ সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়ায় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন।
ক্যউপাল্লাং পাড়ার বাসিন্দা ফিলিপ খেয়াং ও খেউ হ্লাচিং জানান, পাহাড় কেটে ফেলার কারনে মাটি রাস্তায় পড়ে থাকায় বাইক নিয়ে চলাচল করতে ঝুকিতে পড়েছেন তারা। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। এবং পাহাড় কেটে মাটি গুলো রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে পাহাড় কাটার কাজে নিয়োজিত এসস্কেভেটর চালক আরমান বলেন বান্দরবানের ঠিকাদার আনোয়ারের অধীনে গত ছয়-সাত দিন যাবত এই রাস্তার ধারে মাটি কাটার কাজ করছেন তিনি।
ট্রাক চালক জিসান বলেন মাটি ট্রাকে করে গন্তব্যস্থলে প্রতিদিন ১৫বার নিয়ে যাওয়া যায়। তবে পাহাড় কাটার কাজে কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন চালক জিসান। রাস্তাটি সোজা করতে এ টার্নিং পয়েন্টে পাহাড়টি হালকা পাহাড় কাটতে হয়েছে বলেও দাবি করছেন তিনি।
ঠিকাদার হয়ে এ কাজে দেখভালের দায়িত্ব থাকা শহিদুল ইসলাম সাগর নিজেকে সাইট ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে দাবি করেন পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে তাঁর ঠিকাদার কথা বলে ওই পাহাড় থেকে বালু কেনা হয়েছে। তাই এখান থেকে মাটি কেটে রাস্তার কাজে ব্যবহার করছেন।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, পাহাড় থেকে বালু বিক্রির কথা সত্য নয় এবং পাহাড় কাটার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে কেউ পাহাড় কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলেও দাবী করেন এই জনপ্রতিনিধি।
ঠিকাদার আনোয়ার ফোনে বলেন, রুমায় সাঙ্গু নদী থেকে বালু নিতে দিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। তাই এলজিইডির সাথে বুঝাপড়া করে পাহাড়ের বালু সংগ্রহ করে রাস্তার কাজে ব্যবহার করতে হয়েছে।
রাস্তার নির্মাণ কাজে বালু পরিবর্তে মাটি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান এলজিইডি‘র সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের অভিযোগ উঠার পর সাথে সাথেই ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এলজিইডি পাহাড়ের মাটি দিয়ে কাজ করে না এবং যদি ঠিকাদার পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে প্রমান পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইবাংলা/ জেএন/ ২২ মার্চ, ২০২২