পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ত্বীন ফলটি ওষুধি গুণ সম্পন্ন এবং স্বাদে মিষ্টি। প্রথমবারের মতো ডুমুর আকৃতির ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু“ হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের।
ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) নামে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আক্তার নামে এক নারী উদ্যোক্তা ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা শহরের মুন্সিরহাট এলাকায় এ বছর এক একর জমিতে মরুভূমির ত্বীন ফল চাষ করে সফল হয়েছেন।
পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাগানে কর্মরত শ্রমিক আলমগীর হোসেন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ডুমুর আকৃতির ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের।
সম্প্রতি শহরের মুন্সিরহাটে প্রায় দেড়-দুই বিঘা জমিতে করা হয়েছে ত্বীন ফলেন চাষ। বাগান দেখার জন্য নিযুক্ত আছেন ১ মালি ও ২ জন শ্রমিক। বাগানটি দেখতে আসা অনেকেই ত্বীন ফল চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন : মসলিন তুলা চাষে নতুন সম্ভাবনা
ইএসডিও প্রকল্প সমন্বয়ক আইনুল হক বলেন, গত বছরের শেষের দিকে ভারত থেকে মিশরীয় জাতের ত্বীন ফলটির গাছ নিয়ে আসা হয়েছে। ওই বছর এক একর জমিতে এ গাছ গুলো রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপণের কয়েকমাসের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে এখন ৭০-৮০টি করে ফল ধরেছে। তবে গাছটির বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ফলও অনেক বেশি ধরবে বলে জানান তিনি।
এ প্রকল্প সমন্বয়ক আরও বলেন, ত্বীন শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হলেও আমরা এ জেলাতে প্রথম প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও এ ফল উৎপাদন সম্ভব। ত্বীন ফলটির প্রসার বৃদ্ধিতে ইএসডিও কৃষি ইউনিটের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে এটি আরও ব্যাপক ভাবে সম্প্রসারিত করে এ গাছের কলম তৈরির মাধ্যমে যেনো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বাগানের কর্মরত শ্রমিক শফিকুল জানান, ত্বীন গাছে কোনো রকম রাসায়নিক সার দেওয়া হয়নি। জৈব ও কম্পোজ সার মিশিয়ে গোঁড়ায় দিয়েছি। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার মাধ্যমে গাছ গুলো বড় হয়ে উঠেছে। এ সময়ে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি। রোপণকৃত গাছগুলোর মাটি বেলে ও দোয়াস মাটির সংমিশ্রণ হলেও এ আবহাওয়ার সঙ্গে এখন মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন।
আরও পড়ুন : পুষ্টিগুণে ভরপুর ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে সাফল্য
এ বিষয়ে ইএসডিও পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আক্তার জানান, শখের বসে এ ফলের চারা রোপণ করা হয়েছিল। প্রথম বছরে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এখন বাণিজ্যিক ভাবে চারা উৎপাদন ও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে। তবে ত্বীন গাছটির বীজ থেকে চারা উৎপাদনের হার কম হওয়ায় নির্ভরতা করতে হচ্ছে কাটিং বা কলম চারায়। যার কারণ হচ্ছে বীজের চারায় ফলন আসে কয়েক বছর পর। অন্যদিকে কলম চারায় ফল আসে মাত্র ৬ মাসে।
এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্ভাবনাময় এ ফলটি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা গেলে দেশে বেকারত্ব হার কমে আসবে। একই সঙ্গে রফতানির মাধ্যমে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন বলেন, বেসরকারি ভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে এ প্রথমবার ত্বীন চাষ করা হচ্ছে। ত্বীন বা ডুমুর ফলের বাগানটিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপ-সহকারীগণ নিয়মিত পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। কোন রকম রাসায়নিক কীটনাশক সার ছাড়াই এ ফলটি চাষ করা সম্ভব। ডুমুর ফলটি সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এর পাতা গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে দুগ্ধ জাতীয় গাভি থেকে অনেক বেশি পরিমাণ দুধ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও এর পাতা পুকুরে গুড়ো করে ছিঁটিয়ে দিলে পানি বিশুদ্ধ থাকে। এ ফলের ব্যক্তিগত বা বাণিজ্ঞ্যিক চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাবে কৃষি বিভাগ বলেও জানান তিনি।
ইবাংলা/ এইচ / ১৫ নভেম্বর, ২০২১