সিভিল এভিয়েশন নাকি মরুভূমি!

নাসিম আনোয়ার

দু’ ঘন্টা ফ্লাইট লেট। কক্সবাজার বিমান বন্দরে বোডিং পাস নিয়ে বসে আছেন, অসংখ্য যাত্রী।শিশু বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ ছটফট করছেন।এদিক ওদিক তাকালাম, কোথাও খাবার পানি পাওয়া যায় কি না, নেই! কোথাও খাবার পানি নেই!কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীকে প্রশ্ন করলাম, এখানে বিস্কিট, চিপস্, চা পানীয় কিছু পাওয়া যাবে? তিনি উত্তরে বললেন, না। এয়ার পোর্টের ভেতরে কিছুই নেই। আপনাকে বাইরে যেতে হবে। তিনি আরো বললেন, উপরে একটি কেন্টিন আছে। ওখানে ভিসা কার্ড পাঞ্চ করে, খেতে পারবেন।

আমি হাবাগোবা, নিতান্তই অসহায়! কি করবো, বাধ্য হয়েই আবার নিরাপত্তা বেস্টুনির বাইরে বেরিয়ে এলাম। দ্বিতীয় তলায় কেন্টিন! সে তো ভি আই পি কেন্টিন।আমার মতো সাধারন মানুষের ওখানে কিছু খাওয়ার অর্থ দাড়ায়, আমার স্ত্রী সন্তানেরা হক নস্ট করা। কেননা আমি তো, ভি আই পি নই! এ কেন্টিন ক.উ.ক এর চেয়ারম্যান কর্নেল ফোরকান, এম পি কমল,এম পি আশিক, কাজল, বদি, মুজিব চেয়ারম্যান সাহেব এবং বড় বড় সরকারি কর্মকর্তা আমলা ও ব্যবসায়ীদের জন্য।

আমার কাড়ি কাড়ি টাকা নেই। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। রক্ত আর ঘাম বিক্রির টাকায় আমার সংসার চলে।কার্ড পাঞ্চ করে, ভি আই পি খাবার কিভাবে খাবো ? নিতান্তই নিরুপায় হয়ে, আমাকে ইদানিং উড়ো জাহাজে যাতায়াত করতে হয়। কেননা আমি দীর্ঘ সময় সড়ক পথে যাতায়াত করতে পারি না। একদিকে শারীরিক সমস্যা, অপর দিকে সময়ের মূল্য। এই দুটো কারণেই আমাকে আকাশ পথে ভ্রমন করতে হচ্ছে।

এখন ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। গলা শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া, বিড়ি টানার বদ অভ্যাস আছে। এতোটা সময় কি করি!নিরাপত্তা বেস্টনী পেরিয়ে, বাইরে এলাম। ইচ্ছে মতো পানীয়, বিড়ি ফুকলাম। প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হেটে।যদিও এয়ার পোর্ট সংলগ্ন বাইরে একটি দোকান ছিলো, তবে সেখানেও গলা কাটা দাম। এ কারনেই আমাকে আসতে হলো, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এরিয়ার বাইরে। সদর রাস্তার পেরিয়ে ওপারেই যেতে হলো।

এসময়ে আমার যা, যা ইচ্ছে, সবগুলো পূরন হলো।রাস্তায় ধূলো উড়ছে। অবশ্য পুরো কক্সবাজার জুড়েই উন্নয়নের কাজ চলছে। স্বপ্ন দেখছি, আগামিতে সুন্দর একটি পর্যটন নগরী হবে কক্সবাজার। ধূলো আর বিড়ির ধোয়া মিলে, ফুসফুসের বারোটা বেজেগেছে।এখন যা পারি গিলে নিচ্ছি। ঘরে পৌছলে, বিড়ি টানতে পারবো না। বিড়ি তো বিড়িই। নিকোটিন: তা যতো দামিই হোক নীরব বিষ। বিষ তো, বিষই। বিষ খাই জেনে শুনে।

আমার একমাত্র কন্যা নাজিফা শেখ নেহা আর ওর মা, আমার স্ত্রী ফারহানা ঘরে বিড়ি টানতে দেয় না। যতো দামি বিড়িই হোক, তা পেলে সবই ভেঙ্গে ফেলে। জ্বালার শেষ নেই!! বাইরে ধুলোবালু, ঘরে সমস্যা, কোথায় যাই? জেলখানায় না কি, টাকা হলে সব পাওয়া যায়। আমার এখন জেল খানায় যাওয়াই ভালো। ওখানে হয়তো ধুলাবালি নেই। জেলখানায় টাকা হলে বাগের চোখও পাওয়া যায়। আমার তো টাকা নেই! আমি হয়তো পোড়ারুটি ছাড়া কিছুই পাবো না। অন্ধকার জগতের কয়েদি, আর গরিবের শত শত টাকা চুরি করে, যারা জেলে যায়, তাদের জন্য জেলখানায় স্ত্রীও আছে। আমার যেহেতু টাকা নেই, আমাকে জেলে নেওয়া হলে কিছুই দেবে না। লাশটা ও আমার স্ত্রী সন্তান পাবে কি না জানি না।
এখন জেলেই না-কি সর্ব সুখ!

আমাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এখন নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা। কর্তৃপক্ষ তৎপড়। যে ভাবে যাত্রীর শরীরে তল্লাশী চালানো হয়, এতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, লুঙ্গি পরে বিমান বন্দরে যাওয়াই ভালো। কেননা ওখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকদের যাত্রীর শরীরের বিশেষ স্থান গুলো টিপে টিপে দেখতে হতো না। এক টানেই লঙ্গীটা খুলে ফেললেই সব দেখা যাবে।

প্রায়ই যাত্রীরা ভয়ে থাকেন, এই বুঝি আমার লাগেজটা কেটে ফেললো! এখানে নিরাপত্তার নামে তল্লাশি বেশি, চোরও বেশি। আমার অবশ্য লাগেজ নিয়ে ভয় নেই। একটি দুটি, পোটলা আমার সাথে থাকলে, ওটা কেটে ঘোড়ার ডিমও পাবে না। আমি ফকিরনী যাত্রী। বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানির শেষ নেই। শুল্ক থেকে শুরু করে, যাত্রী সেবায় যারা নিয়োজিত আছেন, তাদের ব্যবহার মধুর মতো মিস্টি! এই ব্যবহারে বিমান ভ্রমন করা যাত্রিদের মন ভরে যায়।

হে মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা করো। বিমান বন্দরে আমার রক্ত মশায় খেয়ে ফেলেছে। ঢাকায় খেয়েছে বেশি। ঢাকার মশা গুলো বড় বড়। রাজধানী ঢাকার মশা তো! বিমান বন্দরের মশা, ভি আই পি মশা! আমার ডেঙ্গু জ্বর হলে বিনে চিকিৎসায় মরবো।আমরা কিছুতেই বুঝতে চাইছি না, বাংলাদেশে এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। করোনাকে বুকে জড়িয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সচেতনতাই হবে আমাদের একমাত্র পুজি। করোনা আছে, থাকবে। ভয়কে জয় করতে হবে।

জেলখানায় এখন না কি টাকা আয় করার উৎস! আমার কি হবে? জানি না। ঘরে বউ বিড়ি খেতে দেয় না। বাইরেও বিশেষ করে, এয়ারপোর্টের ভেতরে বিড়ি টানার জায়গা নেই! যাই কোথায়?বাংলাদেশ এখন ইয়াবা রাজ্য। প্রশাসন, বিশেষ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক থাকলে, ইয়াবার বিস্তার লাভ কিভাবে হয়? বেশি বেশি পান শালা প্রতিষ্ঠা করলে সমস্যা কোথায়? এতে ইয়াবার মরন নেশা কমে যাবে।মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা শুধুই হারাম হালাল আর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রচার চালাবে।দেশ বাসিকে জানাতে হবে, এটা হারাম। ইয়াবার মরন নেশায় আসক্ত হলে কি কি সমস্যা হতে পারে এসব বিষয় ব্যাপক প্রচারনা চালানো জরুরি।

কক্সবাজারের প্রশাসন এখন চাঙ্গা এই শহরে মোটা অংকের সেলামী দিয়ে, বদলী হতে ইচ্ছুক, প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তা। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা, মন্ত্রী মহোদয় আপনারা কি ঝিমিয়ে পারছেন? দেশের সিভিল এভিয়েশন প্রসংঙ্গে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য নেই?আমি এখন করোনা-মরোনা নিয়ে আবারো সিভিল এভিয়েশন এলাকায় ঢুকে পরেছি। চিন্তা করবেন না। কক্সবাজারের ধূলোবালি করোনা-মরোনা সব কিছু নিয়ে নিরাপত্তা বেস্টুনির ভেতরে ঠুকে গেছি। বিমানের আসনে বসেছি, আকাশেও উঠেছি। যথা সময়ে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমেছি।

যাত্রা পথে বিমানে আমার পাশে একজন শিশু যাত্রী চিৎকার করছিলো। কিছুতেই তাকে থামানো যাচ্ছিলো না। বিমান কর্তৃপক্ষের কোনোই দয়া মায়া নেই। করোনার অজুহাতে একটি চকলেটও দিচ্ছে না। চকলেট, জুস, ম্যাঙ্গবার, চানাচুরসহ বিমানের যাবতীয় খাবার করোনায় ধরেছে।

উল্লেখ্য, আমি যখন বিড়ি টানতে নিরাপত্তা বেস্টনীর বাইরে ছিলাম, তখন নভো এয়ার কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নাস্তা-জুস বিতরণ করেছেন। অবশ্য সেটা ফ্লাইট লেটের কারণে। ফ্লাইট লেট না হলে ওটাও করোনায় খেয়ে ফেলতো। করোনার অজুহাতে বিভিন্ন বিমান কোম্পানী অভ্যন্তরিন রূটে যাত্রীদের একটি চকলেট ও দিচ্ছে না। ব্যবসা আর ব্যবসা। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা, আমি তো এখন জীবন্ত লাশ। তথ্য দিয়ে যাচ্ছি আর শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখছি।

বাংলাদেশে বিমান! যাকে বলি আকাশের শান্তির নীড়! সেটা তো লোকসানী প্রতিষ্ঠান। কেনো জাতীয় পতাকাবাহী বিমানে লোকসান হবে? অন্যান্য বিমান যেখানে সফল ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে, আমাদের জাতীয় পতাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেখানে লোকসান গুনছে। চোরে গিলে গিলে খাচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকা।আমাদের বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রূ, বিমান বালাদের কোকিল কন্ঠ। বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীদের আকাশে মন তো আনন্দে নেচে ওঠে। শুধুই ভ্রমন করতে মন চায়। আহ্ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

ফলো-আপঃ ২৫ এপ্রিল ২০২১।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর মসজিদেও অশান্তি।দুপুর দূ’ টায় মসজিদে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য আমি এবং আমার শশুর সাহেব নামাজ পড়ছিলাম।একজন আনসার এসে চলমান পাখাটি বন্ধ করে দিলেন।আমি প্রচন্ড ঘামাচ্ছিলাম।আনসারকে প্রশ্ন করলাম পাখা বন্ধ করে দিলেন কোনো? এর মধ্যেই সম্ভবত কর্তব্যরত খাদেম চেচিয়ে বললেন,পাখা চালানো নিষেধ, এখানে এসি চলছে।অথচ ওসময়ে এসি চলছিলো না। দুপুর ২টা ২৫ মিঃ এলাম অভ্যন্তরিন টার্মিনালে দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগারে,কাঁচের দরজাখুলতেই বিকট শব্দ।মনে হলো কি যেনো, ভেঙ্গেচুড়ে আমার মাথায় পড়ল।

উপরে তাকিয়ে দেখি,মারাত্মক সমস্যা।অনেক দিন সংস্করণ করা হয়নি। বড় বড় মশার আক্রমণ।অসুস্থ বা শারিরীক প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্হা থাকলেও, সে চেয়ার দিকে তাকালেই যেকোনো মানুষ বুঝতে পারবেন কতৃপক্ষের কতোটা উদাসিনতা।সিভিল এভিয়েশের লোকজন খুজলাম,কর্তব্যরত ওখানে কাউকে পেলাম না।স্কানার মেশিনে সিকিউরিটির কাজে নিয়োজিত রফিক নামে একজনকে ঘটনা জানালাম।তিনি বললেন, আপনি অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ লিখে জম দিন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, সমাজচিন্তক ও কলামিস্ট

ইবাংলা / নাঈম/ ১ডিসেম্বর, ২০২১

অভ্যাসপিপাসামরুভূমি
Comments (0)
Add Comment