ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য বিধানসভায় নামাজ পড়ার জন্য স্পিকার একটি ঘর বরাদ্দ দেয়ায় প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে ক্ষমতাশীন বিজেপি।
বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিজেপি সমর্থকরা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ‘কালো দিবস’ পালন করছে। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাস্তায় বিজেপি সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও গরম পানি ছোঁড়ে।
বিজেপির প্রতিবাদের ফলে স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো জানান, বিধানসভায় নামাজ পড়ার জন্য ঘর হবে কিনা, তা একটি সর্বদলীয় কমিটি স্থির করবে। কয়েক দিন আগে এক নির্দেশ জারি করে বিধানসভার সচিবালয় জানায় যে টি-ডব্লিউ ৩৪৮ নম্বর ঘরটিকে নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
নামাজের ঘর নির্ধারণ করার নির্দেশ জারি হতেই বিজেপি প্রতিবাদ শুরু করে। গত সোমবার বিধানসভার অধিবেশন শুরু হতেই বিজেপির বিধায়করা বিক্ষোভ দেখান। তারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানও দেন।
ঝাড়খণ্ডে মুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে ২০১৯ সাল থেকে আর বিজেপি সেখানে প্রধান বিরোধী দল।
বিজেপির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন তোষণের রাজনীতির সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা বাবুলাল মারান্ডি টুইট করে লিখেছেন, ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় কোনও একটি শ্রেণীর জন্য নামাজ ঘর করে দেয়া শুধু মাত্র একটা ভুল পরম্পরা চালু করাই নয়, এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত।
স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, আগের ভবনে মুসলমান কর্মচারীদের নামাজ পড়ার জন্য একটি ঘর ছিল। নতুন ভবনে সেরকম একটি ঘরের আবেদন এসেছিল যেখানে তারা নিয়মিত নামাজ পড়তে পারবেন। তাদের আবেদন অনুযায়ী একটা খালি ঘর দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে।
মুসলমানদের জন্য নামাজের নির্দিষ্ট ঘর দেওয়ার পরে বিজেপির বিধায়করা দাবি করছেন বিধানসভা ভবনে একটা হনুমান মন্দির করে দেয়া হোক।
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার ও বিজেপি বিধায়ক সি পি সিং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, “বিধানসভার পুরনো ভবনে দুটো মন্দির আগে থেকেই ছিল। নতুন ভবনেও হনুমানজির মন্দির গড়ে দিতে হবে। এই দাবি না মানা হলে আন্দোলন জোরদার হবে।
স্পিকার মাহাতো বলছেন, আমার কাছে সরকার পক্ষ আর বিরোধী বিধায়ক-উভয়ই সমান। বিরোধী পক্ষ যদি এই দাবি আমার কাছে নিয়ে আসেন, তাহলে তখন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। এটা নিয়ে এখনই ভাবনা চিন্তার দরকার নেই।
অন্যদিকে সরকারে জোটসঙ্গী কংগ্রেস বিধায়ক ডা. ইরফান আনসারি, যিনি সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের হটিয়ে দেয়ায় তালেবানের প্রশংসা করে তীব্রভাবে সমালোচিত হন, তিনি বলছেন, বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ সব রাজ্যের বিধানসভাতেই নামাজ পড়ার জন্য আলাদা ঘর আছে। এটা নিয়ে বিজেপির গেল গেল রব তোলার কোনও মানে হয় না।
স্পিকারের মনে হয়েছে শুক্রবার নামাজের সময়ে কর্মীরা বাইরে নামাজ পড়তে চলে গেলে কাজের ক্ষতি হয়। তাই তিনি একটা ঘর দিয়েছেন। কেউ যদি পুজোর জন্য ঘর চায়, সেটা তারা দাবী তুলুক। ঝাড়খণ্ডের প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ শাহরোজ কামারের দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্য।
তিনি বলছিলেন, বিধানসভার পুরনো ভবনে তো দু-দুটো মন্দির ছিল। দেশের প্রায় সব থানাতেই মন্দির আছে। সরকারি কোনও অনুষ্ঠান বা উদ্বোধন হিন্দু রীতি রেওয়াজ মেনে করা হয়। তখন তো কেউ আপত্তি করে না!
ইই