শ্রীমঙ্গল শহরতলির বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সহ হাট বাজারে দিন দিন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার।
কোন কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না এই নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার , আর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব অপচনশীল দ্রব্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে জনজীবন ও জীব বৈচিত্র্য।
আরও পড়ুন…২৬ কোটি টাকার ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা জব্দ করেছে বিজিবি
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান শপিং মল, কাঁচা বাজার, মাছ বাজারে পলিথিনে পণ্য বিক্রি রীতিমত উৎসব চলছে। অত্র উপজেলার হাট বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে পলিথিনের ব্যবহার । ফলে এসব পলিথিন যত্রতত্র ফেলা দেবার কারনে মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা ও বন্ধ হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
দূষিত হচ্ছে বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহ, সেই সাথে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগ জীবাণু। পলিথিন ব্যাবসা সল্প পূঁজিতে অধিক লাভজনক ও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পলিথিন উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছে এবং রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন…ইবির অভয়ারণ্যে’র নেতৃত্বে রায়হান-অর্প
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহরের অদুরে হাইল- হাওড়ে গিয়ে দেখা যায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া পলিথিন জমা হয়েছে হাওড়ের পানি প্রবাহের খালের ভিতর, যা জলজ প্রাণীদের জীবনচক্র যেমন ব্যাহত করছে তেমনি এই অপচনশীল দ্রব্যে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা, বন্ধ হচ্ছে হাওড়ের পানি প্রবাহ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সুত্রমতে ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রথম পলিথিনের বাজারজাত ও ব্যবহার পর্ব শুরু হয়। সহজে পরিবহন যোগ্য ও স্বল্পমূল্যের কারণে এদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পলিথিনের ব্যাবহার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
আরও পড়ুন…বেগমগঞ্জে ফেনসিডিল-মদসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
কিন্তু ক্রমান্বয়ে পলিথিনের ব্যাপক চাহিদা ও যত্রতত্র ব্যবহার এবং ফেলে রাখার কারনে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে।বিশেষ করে ড্রেন, ডোবা, পুকুর, নালা, খাল সহ বিভিন্ন জলাশয়ে পলিথিন জমা হবার কারনে ওইসব স্থানে জলের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যার দরুন মশা – মাছির প্রজনন বৃদ্ধি, জলজ প্রাণীদের জীবনচক্র ব্যাহত সহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।
আরও পড়ুন…আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যায় আরও ৩ জন গ্রেফতার
এর ফলশ্রুতিতে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, ক্রয় -বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সরকারের পক্ষে নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার একযুগেরও বেশি সময় পরেও আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার।
সরকারি তথ্যমতে, ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারের আইন পাশ করা হয়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ২০০২ সালের দিকে পলিথিন ব্যাগ বা পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারাদেশে এর বিপক্ষে জোরালো অভিযান পরিচালিত হয় এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।
আরও পড়ুন…ভাতের হোটেল’ নিয়ে আসছেন নায়িকা শুভশ্রী
এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পার হয়ে যায়, কিন্তু আইন ভঙ্গ করে যারা পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি বা আইনগত তেমন কোনো প্রক্রিয়া এখন আর দেখা যাচ্ছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় সেই পুরোনো আদলেই মাঠপর্যায়ে পলিথিন ব্যবহার শুরু হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারন ও ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে রপ্তানিমুখী শিল্প ব্যতীত বাংলাদেশে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনকারী শিল্পের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০০২ সালে।
ওই বছরই ১ জানুয়ারি ঢাকায় এবং ১ মার্চ সারাদেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ( সংশোধিত )- ২০০২ অনুযায়ী, এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড – এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন…শোকাবহ আগস্টে বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান
আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এই আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
শ্রীমঙ্গলে পরিবেশ কর্মী ও লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক প্রভাসক জলি পাল বলেন, এদেশে এমনিতেই পরিবেশ বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে, আমাদের হাওড় – নদী- খাল দখলের মহাউৎসব চলছে।
অন্যদিকে বাজারে পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং মানুষের অসচেতনতা আমাদের জন্য আরেকটি অশনিসংকেত, এখনই এর লাগামটেনে না ধরলে আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন…কয়লা খনিতে ৫২ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আবার কয়লা উত্তোলন বন্ধ
পরিবেশ কর্মী রিয়াজ খান বলেন, দেশে পাটজাত পণ্যের বিপনন ও ব্যবহারে আইন করা হলেও সরকারের উদাসীনতা এবং তদারকির অভাবে জনগণ এর সুফল পাচ্ছে না।।
অন্যদিকে এই পলিথিন স্বল্পমূল্যের কারনে মানুষ না বুঝেই এর অধিক ব্যবহার করছে, তাই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারন। সরকার যদি আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ না করে তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের কাঠকড়ায় সবাইকেই একদিন উঠতে হবে।
আরও পড়ুন…নতুন করে করোনায় ১৫ জন সংক্রমিত
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, এই বিষয়টি গতকালকে আমি জেনেছি, এখন আপনিও জানালেন আগামীকাল থেকে আমরা দ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো, এঁদের বিরুদ্ধে।
যারা সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি করছে কারণ এই পিলিথিন পরিবেশের ক্ষতি করে, আমি নিজেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ করে আসছি, কোন ভাবেই অবৈধ পলিথিন রাখা মজুদ বা বিক্রি করা যাবে না। আমাদের ভ্রাম্যমান আদালত এটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
ইবাংলা/জেএন/৩১ জুলাই,২০২২