ভারতে পাঁচার হওয়া ৩৬ কিশোর-কিশোরী বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছে। সোমবার (২০সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভারতের প্রেটাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ও কোলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি দল বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
এসময় ভারতীয় পুলিশের সাথে উপস্থিত ছিলেন কোলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি শামিমা ইয়সমিন স্মৃতির নেতৃত্বে একটি দল এবং বাংলাদেশের প্রান্তে যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা, বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খানসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বৃন্দ।
জানা যায়, স্বদেশে ফিরে আসারা বিভিন্ন সময়ে দালালের প্রলোভনে পড়ে ভারতে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশের কাছে আটক হলে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে কারাগার থেকে কোলকাতার একটি বেসরকারী এনজিও সংস্থা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে।
তারপর দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে দু’দেশের সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরে আসে। এদের ৩৬ জনের মধ্যে ১৬ জন মেয়ে ও ২০ জন ছেলে। এদের অধিকাংশ কিশোর- কিশোরী।
ফেরত আসারা হলো- সাতক্ষীরা জেলার বদর সরদারের মেয়ে মাজেদা খাতুন (২৫), হাফিজুরের মেয়ে হালিমা খাতুন (১৮), ঠাকুরগাঁও জেলার ভারত চন্দ্রর ছেলে নিত্যানন্দ রায় (১৬), রাজবাড়ি জেলার কুমারেশ বালার মেয়ে প্রিয়া বালা (১১), সুনামগঞ্জ জেলার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে আমেনা খাতুন (১৪), বাগেরহাট জেলার রহিম খানের মেয়ে রহিমা খাতুন (১০, রুহুল আমিনের ছেলে রাকিব হাওলাদার (২৩), আল-আমীনের ছেলে সোহেল (১৩), মাসুম শেখের ছেলে আবু শেখ (১৩), আজগর আলীর ছেলে শহিদুল (১৬),
আব্দুস সলাম এর ছেলে রকিবুল ইসলাম (১৭), সুশান্ত মন্ডলের ছেলে দিপু মন্ডল (১৪), মামুন হাওলাদারের মেয়ে লাবনী আক্তার (১১), পিরোজপুর জেলার সালাম মৃধার মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৬), নড়াইল জেলার ইকবাল হোসেনের মেয়ে করুনা বিবি (১৭), নাইম শেখের মেয়ে নিশা আক্তার (২২) ও তার ছেলে আবু বক্কার (১), রাজশাহী জেলার খায়রুল ইসলামের মেয়ে রুমী খাতুন (১৩), ফরিদপুর জেলার মকিম শেখের মেয়ে নার্গিস খাতুন (২০), যশোর জেলার মাসুম শেখের মেয়ে আয়েশা খাতুন (১৫), জাহিদুল ইসলাম মোল্যার মেয়ে জেসমিন আক্তার (১৫), সরোয়ার হোসেনের ছেলে সাকিল হোসেন (১৩), মশিউরের ছেলে রাকিব শেখ (১৬), আয়ুব আলীর ছেলে রুহুল হাসান (১৬),
আব্দুল আলীমের ছেলে সাকিব হাসান (১৬), বরিশাল জেলার সেলিমের ছেলে জুয়েল সরদার (১৬), কুড়িগ্রাম জেলার হামিদুলের ছেলে শাহজালাল (১৭), গোপালগঞ্জ জেলার মিলন সরদারের ছেলে জব্বার সরদার (১৩), মুন্সীগঞ্জ জেলার বিজয় বায়দার ছেলে এরিন বায়দা (১৩), কুমিল্লা জেলার আব্দুল জলিলের ছেলে শায়ন হোসেন (১৪), খুলনার সাত্তার হালদারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (১৪), জামাল গাজির ছেলে মোস্ত্ফা গাজী (১৫), আব্দুর রহমান গাজির ছেলে আবুল হাসান (১৬), জিয়ারুল ইসলাম এর ছেলে শিমুল ইসলাম (১১), বরুন মন্ডল এর মেয়ে আন্না মন্ডল (১৬) ও পিরোজপুর জেলার জিহাদ হোসেনের ছেলে জাহিদ হাসান (১৬)।
ফেরত আসা আমেনা বলেন, আমি আমার মায়ের সাথে ছোট বেলা থেকে ভারতের কোলকাতা শহরের হাওড়া এলাকায় থাকতাম। সেখানে আমি ও আমার মা বাসা বাড়ির কাজের সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ি। তবে আমার মা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমি এখন কোথায় যাব কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, এরা দালালদের মাধ্যেমে বিভিন্ন সময় পাচার হয় ভারতের বিভিন্ন শহরে। সেখানে তারা নানা ধরনের কাজ করার সময় আটক হয় সেদেশের পুলিশের কাছে। এরপর আদালতের মাধ্যেমে তারা দেড় থেকে দুই বছর মেয়াদে জেল খেটে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে দেশে ফেরত আসে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্টানিকতা শেষ করে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান বলেন, ফেরত আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের থানার আনুষ্টানিকতা শেষে যশোর রাইটস, এনডাবিøউডি ও জাস্টিস এন্ড কেয়ার নামে বেসরকারী এনজিও সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাস্টিস এন্ড কেয়ার নামের এনজিও সংস্থার ফিল্ড ফ্যাসিলেটেটর রোকেয়া খাতুন বলেন, এসকল কিশোর কিশোরীরা বিভিন্ন সীমান্ত পথে পাসপোর্ট ভিসা বাদে দালালদের খপ্পরে পড়ে ভারতে পাঁচার হয়। এরপর সেদেশের পুলিশের কাছে আটক হয়ে জেল খানায় যায়। এরপর জেল থেকে একটি বেসরকারী এনজিও তাদের ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। তারপর দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে দু’দেশের সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে দেশে ফিরে এসেছে। এদের মধ্যে কেউ আইনি সহযোগিতা নিতে চাইলে তাকে আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
যশোর রাইটস এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, এসকল কিশোর কিশোরী বিভিন্ন ভাবে দালালদের মাধ্যমে পাঁচারের শিকার হয়। পরে এরা ভারতের কোলকাতা ও আশে পাশের শহরে আটক হয় বিভিন্ন কাজের সময়। আমরা ভারতীয় এনজিও সংস্থার সাথে যোগাযোগের মাধ্যেমে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় নিয়ে এদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। আমাদের যশোর হোমে নিয়ে এদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব বলে জানান তিনি।
ইই