নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা:
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বাঁশরা গ্রামের বাড্ডাবাড়িতে এক বাড়িতে প্রথমে হামলা করে বাঁধন ও তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ হামলায় ওই বাড়ির নুর মিয়ার ছেলে হাছান আহত হয়। এ ঘটনার জেরে ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিপক্ষের লোকজন বাঁধনের বাড়িতে হামলা করে।
দীর্ঘদিনের দ্বন্ধ, আক্রোশ আর বিরোধের জের হিসাবে প্রতিপক্ষের হামলায় গত ২৩ এপ্রিল ২০২৩ বাধন গুরতর আহত হয়। আহতবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)-৪
এ ঘটনায় বাঁধনের মা রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে ৬৯ জন কে আসামী করে দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হামলা বা হত্যার ঘটনায় জড়িত না এমন নিরীহ লোককেও মামলায় আসামী করা হয় বলে এলাকাবাসী প্রতিবেদক কে জানায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিহত বাঁধনের আপন মামা মো: সোহাগ মিয়া ওরফে পিস্তল সোহাগ রাজউকের একজন উপ পরিচালক। মামলার এজাহারভুক্ত আসামী (৬৪) মো: শফি ভুইয়া, (৬৫) মো: জিল্লুর করিম ভূইয়া, (৬৬) মো: মাহমুদুল হক প্র: বুলু, (৬৭) শাহ মাহমুদুল হক, (৬৮) আ: সাত্তার মানিক, (৬৯) শাহরিয়ারদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের থাকায় এই হত্যা মামলা আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজউকের বিতর্কিত উপ পরিচালক সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগ মূল ঘটনাকে আড়াল করে উক্ত ব্যক্তিদের ওপরে কিশোর গ্যাং প্রধান ভাগিনা প্রতিপক্ষের হামলায় নিহতের ঘটনায় জড়িত করাই তার মূল কাজ। যারপরণায় এই ব্যক্তিদের নাম এই মামলার এজাহারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। অথচ এ ঘটনার সাথে এদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব) ৩
পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও পক্ষদ্বের মধ্যে ভাগাভাগির কারনে এ খুনের অন্যতম কারন বলে এলাকাবাসী মনে করেন। অপরাধ চক্রের হোতা রাহেজুল আমিন বাধনের মৃত্যুতে এলাকায় এখন থমথমে ভাব বিরাজ করলেও অনেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রতিবেদককে অনেকে জানান, বর্তমানে এলাকায় সকল ধরনের অপকর্ম আপাতত বন্ধ আছে। তবে পুলিশ এ মামলার উছিলায় নিরীহ লোককেও হয়রনি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। মামলার ভয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত।
বাঁশরা গ্রামের বাসিন্দা কিশোর গ্যাং প্রধান রাহেজুল আমিন বাধন। মা-বাবার অবাধ্য সন্তান বাধন ছোটবেলা থেকে ডানপিঠে ছিল। কিশোর বয়সেই নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় গড়ে তোলে শক্তিশালী অপরাধী চক্র।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবলের চাকরি পেয়ে যায় বাঁধনে। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পরে আরও বেশি ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করতে থাকেন বলেও জানান স্থানীয়রা। বাঁধনের বিরুদ্ধে গুম,খুন,অপহরন,ছিনতাই, চাঁদাবাজি,অস্রবাজীসহ নানা অপরাধের জন্য ৭ টি মামলা হয়েছে। থানার সে তালিকাভুক্ত অপরাধী।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)২
এ কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান হিসাবে এলাকায় নানাভাবে মানুষকে হয়রানি করে ,তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। গুম,খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে ৭টি মামলার আসামি ছিলেন বাধন। একের পর এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে থাকেন এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে।
স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ পুলিশ প্রশাসন ও এ বাধন বাহিনীর অপকর্মে নাখোশ বিরক্ত এবং বিক্ষুব্ধ ছিল। জায়গা-জমি, ফ্লাট বিক্রি, বাড়ী ঘর নির্মাণে এলাকাবাসীর উপর চাঁদা দাবী করে। চাঁদা প্রদানে অনিহা প্রকাশ করলে মানুষকে নাজেহাল করে এবং নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতি করে ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে এলাকাবাসী ঢাকা চট্রগ্রাম রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনও করে এবং বাধনকে গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবী করে। অপরাধের দায়ে দুই বছর আগে পুলিশ কনস্টেবল পদ থেকে চাকরিচ্যুত হয়। তারপরও তার মনে কোন অপরাধ বোধ জাগেনি বরং আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
নিহত বাঁধনের ভাবি আয়েশা আক্তার বলেন, দক্ষিন পাড়ার হাসেম, রুবেল ও মানিকসহ ২০/২৫ জনের সন্ত্রাস বাহিনী রামদা, হকিস্টিক লোহার পাইপ নিয়ে আমাদের বাড়ীতে হামলা করে। তাদের ভয়ে আমার দেবর পাশের রফিক কাকার দালানে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়েও তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। এসময় সন্ত্রাসীরা আমার ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)১
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, বাঁধনের অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। কোনো অনুষ্ঠান করলেই তাকে চাঁদা দিতে হতো। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। তার হয়রানির শিকার বাসরাসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন বাঁধনের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এবং তার বিচার দাবী করে ২০২১ সালের ১৭ আগষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুটিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷
ইবাংলা/ আই এইচ