পাহাড়ের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করতে অত্রাঞ্চলে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা সু-প্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান অস্থিরতা দূরকরণে মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আর সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে পার্বত্য মন্ত্রণালয়। শনিবার রাঙামাটির ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পার্বত্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, খাগড়াছড়ি অপহৃত থেকে পাঁচ পাহাড়ী শিক্ষার্থীদেরকে সুস্থ্যভাবে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন সন্মিলিতভাবে কাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পর পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস চাঁদাবাজি কিভাবে বন্ধ করা যায় তার উদ্যোগ নেয়া হবে।পাহাড়ে অপকর্মের সাথে যারা জড়িত; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এসময় তিনি সাংগ্রাই উৎসবের মাধ্যমে পাবত্য চট্টগ্রামে শান্তি সম্প্রতি বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এরআগে জল উৎসব উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলতে কিছু নেই। নেই কোন বৈষম্য। ভবিষ্যতে কেউ যেন বৈষম্যর স্বীকার না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। উন্নয়ন সকলের জন্য করতে হবে। আমরা সকলে একসাথে আছি, আমাদের মধ্যে ডাইভারসিটি থাকতে পারে। সবাই আমরা বাংলাদেশী।
তিনি বলেছেন,”পার্বত্য এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন কাজ করে থাকে। আমি এ ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। আমি চাই, এডুকেশন বেইজড ডেভেলপমেন্ট। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য স্যাটেলাইট এডুকেশন পলিসি চালু করতে হবে।
দুর্গম এলাকার শিক্ষাথীদের জন্য উপজেলা সদরে আবাসিক হোস্টেল করে অষ্টমশ্রেনী পর্যন্তএবং জেলা শহরে হোষ্টেল করে সেখানে ডিগ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এখানকার লাইভলিহুড ইমপ্রুভ করা এবং ভারসাম্য পরিবেশ গড়ে তোলা খুবই জরুরি। “হারমোনিয়াস উন্নয়ন দেখতে পাহাড়ে থাকলে সমতল থেকে পিছিয়ে আছি তা ভাবা যাবেনা। কিভাবে উন্নয়ন হবে তা সবাই বলতে হবে।
নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করা হবে। দেশের বৈষম্য দুর করা এবং আর্থিক উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে সরকার কাজ করছে।
নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি,ঐহিত্যকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে শনিবার (১৯ এপ্রিল) মারমা সংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস) এর উদ্যোগ সাংগ্রাই জল উৎসব রাঙ্গামাটির চিংহ্লামং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন…বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের
পুরাতন বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, অপশক্তি দূর করে ধুয়ে মুছে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠেন মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন। সাংগ্রাই গানের সুরে সুরে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে দেন। দিন ব্যাপী উৎসব পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিণত হয়।
সাংগ্রাইং উদযাপন কমিটির সভাপতি থোয়াই সুই খই মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত জল উৎসবে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও তার স্ত্রী-কন্যা, ইতালির আ্যম্বাসেডর, নেদারল্যান্ডস আ্যম্বাসেডর ও ডাচেস আইনবিদ, পার্বত্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, যুগ্ম সচিব কঙ্কন চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন। পরে প্রধান অতিথি অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে ফিতা কেটে ও পানি ছিটিয়ে দিয়ে জলকেলির উদ্বোধন করেন।
সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক একটি রাজনৈতিক দলের বাধার মুখে কাউখালী,কাপ্তাই ও রাজস্থলী এলাকা থেকে অনেক মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন আসতে না পারলেও বৃষ্টি থামার সাথে সাথে রাঙ্গামাটির চিংহ্লামং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে এই আয়োজনে হাজার হাজার নারী-পুরুষে পরিপূর্ন হয়ে যায়।